নিজস্ব প্রতিনিধি:
পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কালীগঙ্গা নদীর পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নদীর ভাঙনও। কালীগঙ্গার দক্ষিণ তীরের শোল্লা ও কৈইলাইল ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখন আতঙ্কে দিন পার করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া কালীগঙ্গার তীব্র স্রোতে প্রতিদিনই নদীর তীর ভেঙে চলছে। গত দুই বছরে দুই ইউনিয়নের প্রায় চার শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালুখন্ড, উত্তর বালুখন্ড, পাতিলঝাপ, চকুরিয়া, খতিয়া, সিংজোর, কুন্ডা এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে এখানকার মসজিদ, মাদরাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাতিলঝাপ উচ্চ বিদ্যালয়, পাতিলঝাপ হাট-বাজারসহ প্রায় দেড় শতাধিক স্থাপনা।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। তখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যাবে।
কৈইলাইল ইউনিয়নেও নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে। মেলেং, পাড়াগ্রাম, মালিকান্দা ও দৌলতপুর এলাকায় গত দুই বছরে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক দিনে ধরে কালীগঙ্গার দুই পাড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আতঙ্কে দিন পার করছেন দুই তীরের ছয়/সাত গ্রামের শত শত মানুষ।
তারা জানান, কালীগঙ্গার এমন রূপ আগে দেখা যায়নি। বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে তারা এখন বসতি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। শোল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমান বলেন, কালীগঙ্গার তীব্র স্রোতে প্রতিদিনই নদীর তীর ভেঙে চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে নদীপাড়ের শত শত মানুষকে।
‘এর আগে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও নদীর তীব্র স্রোতের কারণে খুব একটা উপকারে আসেনি। এলাকাবাসী ও আমাদের দাবি, স্থায়ীভাবে নদীর ভাঙন রোধে ব্লক ফেলার দাবি জানাচ্ছি।’
কৈইলাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের পাঁচটি পয়েন্টে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। বিশেষ করে কালিগঙ্গার দক্ষিণ তীরের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু বলেন, সরেজমিনে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানের দিকনির্দেশনায় গত বছর কয়েকটি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এবারও তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে এলাকার মানুষ। নদীর পানি এখন বাড়ছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়বে। এমপি মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আমিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে দুটি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
তিনি আরও বলেন, নদীর তীর সংরক্ষণ ও ভাঙন রোধে ৩৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দুই ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তারা।
নবাবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দীন মনজু বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় কালীগঙ্গার কয়েকটি পয়েন্টে জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ৩৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কালীগঙ্গা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবেন হাজারও মানুষ।
বিএসডি/আইপি