ধর্ম ডেস্ক:
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। মানুষ যেমন তার অর্ধেক অঙ্গ নিয়ে পূর্ণ জীবনের সাধ পেতে পারে না, তেমনি একজন ব্যক্তি একজন ভাল স্বামী বা স্ত্রী ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। একে অপরকে যতটা বুঝতে পারবে তাদের জীবন ততটাই সুন্দর ও মধুময় হবে।
একজন মেয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া হলো ভালো একজন স্বামী পাওয়া। ঠিক তেমনি একজন পুরুষের জীবনে অন্যতম আশা থাকে আদর্শবান একজন স্ত্রী পাওয়া। কারো জীবনে উপযুক্ত সহযাত্রী হওয়ার জন্য হওয়া চাই বিশ্বাসী আর থাকা চাই তাকে ভালোবাসার মতো ক্ষমতা। যা একজন আদর্শ স্ত্রীর মধ্যে থাকে।
স্বামীর বাড়ির লোকজন যেমনই হোক, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বুঝতে পারে, তাকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিতে পারে, তাহলে তাদের সংসার জীবনে অনাবিল সুখে ভরপুর হয়ে থাকবে সবসময়। সেখানেই পাওয়া যাবে স্বর্গের আবাস। এজন্য একজন ভাল স্বামী ও স্ত্রী পাওয়া দু’জনের জন্যই ভাগ্যের ব্যাপার।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ। তিনি একদিকে যেমন একজন নবী-রাসূল, অন্যদিকে তিনি তার স্ত্রীদের নিকট সবচেয়ে ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। একজন স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি আপনার স্বামীকে আদর্শ বানাতে পারেন তবে পৃথিবীর সব স্ত্রীই সুখী হবেন। আবার একই ভাবে উত্তম স্ত্রী হতে হলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের মত একজন আদর্শ বিবির বৈশিষ্ট্য আপনাকে অবশ্যই ধারণ করতে হবে।
আপনি একজন ভালো স্ত্রী হতে হলে অবশ্যই যে বিষয়ের উপর আপনাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ:
শুধুমাত্র সংসারের যাবতীয় কাজ করলেই আপনি উপযুক্ত কিংবা আদর্শ স্ত্রী হতে পারবেন না। তার জন্য চাই ভালোবাসা।
১.নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন। আপনি দুঃখ পান কিংবা সুখে থাকুন যেকোনো অবস্থাতেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা একজন স্ত্রীর জন্য জরুরি তবে সেটা পরিস্থিতি বুঝে।
২.ঝগড়া থেকে দূরে থাকুন। মান-অভিমান দু’জনের মাঝে হতেই পারে কিন্তু হলেও কম সময়ের মধ্যে আপনি আগেই হাসি মুখে কথা বলুন। ভাবছেন অভিমান মুহুর্তে কি কথা বলবেন? মনে আছে কোন এক মুহুর্তে আপনাকে বলে ছিল,তোমাকে এই পোশাকে দেখতে অসাধারণ লাগে, ঠিক তেমন কিছু পড়ে আপনার স্বামীর পাশে গিয়ে বসুন,চোখের দিকে তাকিয়ে সালাম বিনিময় করুন। দেখবেন অভিমান শেষ।এই ঝগড়ার ভয়ে অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীর কাছ থেকে অনেক কথা লুকিয়ে রাখে। তাই আপনি আপনার স্বামীকে প্রথমত আশ্বস্ত করুন,যে আপনি কোনো বিষয় নিয়েই ঝগড়া করবেন না।
৩.স্বামীকে তার খারাপ কিংবা ভালো যেকোনো সময়েই সঙ্গ দিন। আর তার সমস্যাগুলোকে বুঝার চেষ্টা করে নিজের মতো সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৪.আপনার স্বামীকে বুঝার চেষ্টা করুন।প্রত্যেক স্বামী চায় স্ত্রীকে নিজের মত করে পেতে। তাঁর মনের মত হবার জন্য মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করুন, আপনার কোন আচরণটি তাঁর অপছন্দ। এতে একজন আদর্শ স্বামী খুব খুশি হবে এই ভেবে তাঁকে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
৫.আপনাকে কোথায়ও যেতে নিষেধ করলে, তাঁর নিষেধ অমান্য করে কোথাও যাবেন না। সময় বুঝে বুঝিয়ে কথা বলে অনুমতি নিন।
৬.স্বমীর মুখের উপর কোন কথা বলবেন না।তিনি কি বলতে চায় মনযোগ দিয়ে শুনার চেষ্টা করুন। না বুঝে থাকলে কোমলীয় নরম মিষ্টি ভাষায় জিজ্ঞেস করুন।
৭.আপনার সকল ইচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা ভালো মুহূর্তে আপনার স্বামীর সাথে শেয়ার করুন।ঠিক একইভাবে তাঁর ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ও জানার চেষ্টা করুন।
৮.একই সাথে ইবাদত করার জন্য আহ্বান করুন। স্বামীর বাবা-মা কে নিজের বাবা-মায়ের মত আচরণ করুন।
৯.সত্য তুলে ধরুন আপনি জানেন যে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা,এমন বিষয়ে স্বামীকে আশ্বাস দেয়া ঠিক না। এতে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস কমে যায়। তাই আপনি সব সময় আপনার স্বামীর কাছে সত্য চিত্রটি তুলে ধরুন।
এতে আপনার স্বামী সাময়িক কষ্ট পেলেও পরবর্তীতে তা আপনার প্রতি কেবল বিশ্বাস আর ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।
এই বিষয়গুলো নিজের মধ্যে ধারণ করুন।তবেই আপনার সংসারটা সুখময় হয়ে উঠবে। আপনি পাবেন আপনার স্বামীর সীমাহীন ভালোবাসা। আপনার স্বমী আপনাকে নিয়ে সকলের কাছে গর্ব করবে। বলবে, এমনই একজন স্ত্রী তার জীবনের স্বপ্ন ছিল। স্বমীদের উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, “তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও।
লেখক: মো. ইব্রাহীম প্রামানিক
ঢাকা ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি, রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগ