আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এমপি এবং দেশটির ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
একদিকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগে ব্রিটেনে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প থেকে অর্থ সরানোর অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি টিউলিপের ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে মন্ত্রিসভা থেকে টিউলিপি সিদ্দিককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। টিউলিপের নিজের দল লেবার পার্টির এমপিরা যদিও এখনও এ ইস্যুতে প্রকাশ্যে কিছু বলেন নি, তবে তাদের অনেকেরও চাওয়া একই।
তবে এত অভিযোগ সত্ত্বেও এখনও বহাল তবিয়তেই মন্ত্রিসভায় আছেন টিউলিপ সিদ্দিক। সম্ভাব্য যেসব কারণে এখনও তিনি মন্ত্রিসভা থেকে ছাঁটাই হননি— সেসব বিশ্লেষণ করেছেন ব্রিটেনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং বিখ্যাত ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক-কলামিস্ট স্টিফেন বুশ।
সোমবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক কলামে স্টিফেন বুশ এ প্রসঙ্গে বলেন, “ব্রিটেনের সাবেক পরিবহনমন্ত্রী লুসি হাইয়ের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ উঠেছিল। প্রায় ১০ বছর আগে ঘটেছিল ঘটনাটি এবং তিনি অপরাধ স্বীকার করার পর তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল।”
“অন্যদিকে সম্প্রতি টিউলিপের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে ইতোমধ্যে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও এ বিষয়ে সরকারি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।”
“কিন্তু কথা হলো, যেখানে ১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেওয়ার জন্য লুসি হাইকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হলো— সেখানে টিউলিপ সিদ্দিকী কীভাবে ফ্ল্যাট বিষয়ক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন?”
“এ প্রশ্নের একটি উত্তর হলো— ‘নৈকট্য’; লুসি হাই লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেরেমি করবিনের কাছ থেকে। জেরেমি করবিন যে তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, তার প্রধান কারণ হলো ২০১৫ সালে লেবার পার্টির শীর্ষ নেতা নির্বাচনের সময় জেরেমিকে সমর্থন করেছিলেন লুসি।”
“অন্যদিকে টিউলিপ সিদ্দিক বরাবরই লেবার পার্টির একজন পাওয়ার প্লেয়ার। টিউলিপের নির্বাচনী আসন হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মারের নির্বাচনী আসনের পাশেই। এছাড়া টিউলিপ অনেক বছর ধরে কেয়ার স্টারমারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছেন। স্টারমার যখন দলের উদীয়মান নেতা— তখন থেকেই তার সমর্থক টিউলিপ।”
“আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী এমনিতে নিজের বন্ধু-আত্মীয় ও সমর্থকদের দুর্নীতির প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে থাকলেও অনেক সময় তাদের রক্ষাও করেন। এছাড়া আরও একটি কারণ হলো আওয়ামী লীগ লেবার পার্টির ভাতৃপ্রতিম রাজনৈতিক দল। যুক্তরাজ্যে এই দলটির সমর্থকরা একই সঙ্গে লেবার পার্টিরও সমর্থক। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ লেবার পার্টির অন্যতম ভোট ব্যাংক এবং টিউলিপ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি।”
সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল টাইমস