আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে অনেকটাই পরিবর্তিত কাবুলের চিত্র। মানুষজন খুব একটা বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এরপরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কাবুলে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধই রয়েছে। যারা বাইরে চলাফেরা করছেন সবার ভেতর কাজ করছে উদ্বেগ। অনেকে আবার তালেবানকে স্বাগতও জানাচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলেন, তারা হয়তো দ্রুতই সরকার গঠন করবে, তারপর চাকরির ব্যবস্থাও করতে পারে। আশরাফ ঘানি দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে। যার মাশুল দিতে হবে আমাদের।
তালেবান আসার পর থেকে কাবুলের নিরাপত্তা অনেক জোড়দার করা হয়েছে। তবে, সবার ভেতর একধরণের আতঙ্ক কাজ করছে। তবে, ব্যাংক বীমা বন্ধের প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে না পারা এবং রেমিট্যান্স বন্ধ থাকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, আটার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে জীবিকা নির্বাহে হিমসিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা বলেন, মানুষ অনেক ভয়ে আছে। কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসছেন না।
এরইমধ্যে, অনেক এলাকায় লোকসমাগম দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, দেশটির চলমান অস্থিরতা দ্রুতই শেষ হবে। আবারও স্বাভাবিক হবে ব্যবসা বাণিজ্য।
এরই মধ্যে তালেবানদের সরকার গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোমবার(২৩ আগস্ট) ইরানের সংবাদ মাধ্যম পার্সটুডেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকার দিয়েছেন গোষ্ঠী রাজনৈতিক মুখপাত্র সোহাইল শাহিন।
সোহাইল শাহিন জানান, তারা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চান এবং দেশের সব নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সরকার গঠন করবেন। তালেবান সরকারে শুধু মাত্র পাশতুনদের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসলামি সরকার কোনো নৃ-গোষ্ঠীর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হবে না। আপনি জানেন যে, আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশসহ আরো কয়েকটি প্রদেশে তাজিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, ফারিয়া ও সারে পোলের মতো প্রদেশগুলোতে রয়েছে উজবেক জনগোষ্ঠী। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে পাশতুন জনগোষ্ঠী। এরা সবাই আফগানিস্তানের জনগণ এবং তারা ইসলামি সরকারের অংশ হবে।’
সোহাইল শাহিন জোর দিয়ে বলেন, ‘তালেবানের নেতৃত্ব একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যাতে আফগান সরকারে সবার অংশ গ্রহণ থাকে। সরকারে এবং দেশ পুনর্গঠনে সব নৃ-গোষ্ঠীর অংশ নেয়ার অধিকার রয়েছে। সবাই যাতে দেশের জনগণের সেবা করতে পারে সেজন্য অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন করা হবে।’
ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী(আইএস) সম্পর্কে তালেবানের এ মুখপাত্র বলেন, ‘আফগানিস্তানের এটি একটি বিদেশী চক্র, দেশের মাটিতে কোথাও এদের ঠাঁই হবে না।’ সোহাইল শাহিন জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাইছে তালেবান।
মেয়েদের শিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থান সম্পর্ক সোহাইল শাহীন বলেন, ‘আফগানিস্তানে হাজার হাজার গার্লস স্কুল রয়েছে। সেগুলো চালু আছে। কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে। নারী শিক্ষকরাও তাদের কাজ শুরু করেছেন। ফলে নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে প্রবেশে আমাদের কোনো সমস্যা নেই তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামি হিজাব মানতে হবে। নারীদের অধিকার থাকবে, তবে শুধুমাত্র হিজাব মানার শর্ত থাকবে’
এর আগে আইনি, ধর্মীয় এবং কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তালেবান নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরি করবে বলে জানিয়েছিলেন তালেবানদের রাজনৈতিক মুখপাত্র সোহাইল শাহিন। সোমবার (১৬ আগস্ট) শাহিন বলেছেন, আফগানিস্তানে এখন যে সরকার গঠিত হবে তাতে শুধু তালেবান সদস্যরা থাকবেন না বরং সেখানে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের বিখ্যাত সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নয়া সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র আরও বলেন, এতদিন ধরে আফগান সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ সব নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত যে কেউ তার অস্ত্র সমর্পণ করে তালেবানে যোগ দেবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
বিএসডি/এএ