ব্রাসিলিয়ায় ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন ওঠে লিওনেল মেসিকে নিয়ে। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে, আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজ খেলবেন মেসির জায়গায়!
কিন্তু ম্যাচে আর্জেন্টিনার মূল একাদশে দেখা গেল দুজনকেই। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ১-০ গোলের জয়ে গোলটা এসেছে পাপুর পা থেকে আর মেসি ছুঁয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড।
আর্জেন্টিনার হয়ে এতদিন সর্বোচ্চ ১৪৭ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি একার দখলে রেখেছিলেন সাবেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হাভিয়ের মাচেরানো। আজকের ম্যাচটি দিয়ে মাচেরানোর রেকর্ডে ভাগ বসালেন মেসি।
এই জয়ে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা। ৩ ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে মোট ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষস্থান ধরে রাখল লিওনেল স্কালোনির দল। পাঁচ দলের গ্রুপে ৪টি করে ম্যাচ খেলবে প্রতিটি দল। দুটি গ্রুপ থেকে ৪টি করে দল নাম লেখাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।
উরুগুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচের মূল একাদশে মোট ছয়টি পরিবর্তন এনে এ ম্যাচে ৪-৩-৩ ছকে দল সাজান আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগে দুটি করে পরিবর্তন আনেন তিনি।
রক্ষণে নিকোলাস ওতামেন্দি ও মার্কাস আকুনোর জায়গায় জার্মান পেজ্জেলা ও নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকোকে নামান তিনি। মাঝমাঠে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও উইংয়ে পাপু গোমেজ ডাক পান। আর্জেন্টিনার মূল একাদশে এ ম্যাচ দিয়েই অভিষেক ঘটল সেভিয়া উইঙ্গারের। আক্রমণে মেসির পাশে ডাক পান সের্হিও আগুয়েরো ও আনহেল ডি মারিয়া।
অভিষেকেই ম্যাচের ১০ মিনিটে গোল আদায় করে নেন পাপু গোমেজ। এতে অবশ্য আনহেল ডি মারিয়ার অবদানই বেশি। ডান প্রান্ত থেকে দারুণ এক পাস দেন ডি মারিয়া।
পাপুর ফিনিশিংটা অবশ্য ছিল দেখার মতো। অবদান রয়েছে মেসিরও। মাঝমাঠে প্যারাগুয়ের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান উইংয়ে ডি মারিয়াকে পাস দেন মেসি।
ডি মারিয়া স্বভাবসুলভ কাট ইন করে ভেতরে ঢুকে শট নেওয়ার ডামি করে ডিফেন্সচেরা পাস দেন পাপু গোমেজকে। প্যারাগুয়েকে গোলকিপারকে একা পেয়ে তাঁকে ফাঁকি দিয়ে গোল করে জাতীয় দলের মূল একাদশে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখেন ৩৩ বছর বয়সী এ উইঙ্গার।
প্রথমার্ধে একদম শেষ মুহূর্তে প্যারাগুয়ের জালে আরও একবার বল পাঠায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার জোরাল শট কোনোমতে রুখে দেন প্যারাগুয়ে গোলকিপার আন্তনি সিলভা।
বাঁ প্রান্তে চলে আসা বলে আবারও জোরাল শট নিয়ে ক্রস করেন পাপু গোমেজ। কিন্তু বলটি প্যারাগুয়ের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে আশ্রয় নেয় জালে। রেফারি ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অফসাইডের জন্য গোলটি দেননি। যদিও মেসির এই অফসাইড হওয়া নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ থাকবে। ধারাভাষ্যকারই সে কথা বলে দেন।
বিরতির আগে গোলের মুহূর্ত ছাড়া বাকি সময় তেমন ভালো খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের খেলোয়াড়দের কড়া মার্কিং ভেদ করে সেভাবে আক্রমণ করতে পারেননি মেসি-ডি মারিয়ারা। আগুয়েরো প্রথমার্ধে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। এ সময় একটু বেশিই শরীরনির্ভর ফুটবল খেলে প্যারাগুয়ে। ন্যূনতম ১৫টি ফাউল করেছে তারা প্রথমার্ধে।
বিরতির পরও শরীরনির্ভর ফুটবল খেলা থামায়নি প্যারাগুয়ে। গোটা ম্যাচে মোট ২৩টি ফাউল করে তারা। প্যারাগুয়ে যে একদম আক্রমণ করতে পারেনি তা নয়।
গোলপোস্ট তাক করে নেওয়া ১০টি শটের মধ্যে তারা পোস্টে রাখতে পেরেছে মাত্র ২টি শট। কিন্তু আর্জেন্টিনা তাদের চেয়ে কম শট (৮) নিয়ে পোস্টে রাখতে পেরেছে ৪টি।
যদিও বল দখলে রেখে স্বভাবসুলভ যে পাসের খেলা, আর্জেন্টিনা তা উপহার দিতে পারেনি। প্যারাগুয়ে ৫৭ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে খেলেছে। আর্জেন্টিনা তারকাদের পাশে ৪৩ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে খেলা একটু বেমানানই।
কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছর পর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তুলে নেওয়া জয়ের স্বাদটা ভালোই লাগবে মেসিদের।