ইউরোপীয় ফুটবলে ম্যানচেস্টার সিটি বড় শক্তি বেশ কয়েক বছর ধরেই। ধনকুবের মালিকের অর্থে ফুলেফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সত্যিকারের বড় দল হয়ে ওঠার চেষ্টাটাও সিটির অনেক দিন ধরেই। পেপ গার্দিওলাকে কোচ বানানো হয়েছে সেই পথ দেখানোর জন্য। অর্থও খরচ হচ্ছে দেদার। কিন্তু সাফল্যটা আসছিল না। সাফল্য বলতে ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব, কিংবা শ্রেষ্ঠত্বের কাছাকাছি পৌঁছানো। চ্যাম্পিয়নস লিগে বারবার কোয়ার্টার ফাইনালের দুঃখ সইতে হয়েছে তাদের। ফিরে যেতে হয়েছে শেষ চারে পা রাখার আগেই। তবে এবার সেই কষ্ট, সেই দুঃখ ঘুচেছে সিটির। তিন তিনবার শেষ আট থেকে বিদায় নেওয়ার পর এবার বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে তারা। কাল রাতে ডর্টমুন্ডের মাঠে গার্দিওলার দল জিতেছে ২-১ গোলে। সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ পিএসজি। এটি সিটির দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চার।
কোয়ার্টারে ফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ডর্টমুন্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল সিটি। কিন্তু সেদিনই গার্দিওলা শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দ্বিতীয় লেগে ডর্টমুন্ডের প্রতিরোধ নিয়ে। সে কারণেই তিনি অস্বস্তিতে ছিলেন। সিটি-গুরুর শঙ্কাটা কিংবা অস্বস্তি যে মোটেও অমূলক ছিল না, সেটি প্রমাণ হয়েছে কাল। জুড বেলিংহামের গোলে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল ডর্টমুন্ডই। পরে ডর্টমুন্ডকে স্বপ্ন ভেঙেছেন রিয়াদ মাহরেজ ও ফিল ফোডেন।
সেমিফাইনালে উঠতে জয় ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না ডর্টমুন্ডের। ১৫ মিনিটেই তারা প্রথম গোল পেয়ে যায়। হরলান্ডের একটি শট সিটির রক্ষণভাগ ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বল পেয়ে যান বেলিংহাম। ১৮ বছর বয়সী ইংলিশকে ডর্টমুন্ড কেন আগ্রহ করে কিনেছিল, সেটির প্রমাণ রেখেছেন তিনি। যে গোলটি তিনি করেন, তাতে শটে শক্তির তীব্রতা যেমন ছিল, তেমনি ছিল শিল্পীর তুলির আঁচড়।
গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া সিটি খেলায় ফিরতে পারত কেভিন ডি ব্রুইনার মাধ্যমেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য ব্রুইনার। তাঁর নেওয়া শটটি ডর্টমুন্ডের পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলেও সুযোগ নষ্ট করেন বার্নার্দো সিলভা। ফিরতি বলে হেড করেও পোস্টে রাখতে পারেননি তিনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেনাল্টি থেকে অ্যাওয়ে গোল তুলে নেয় সিটি। গোল করেন মাহরেজ। এমরে চানের হাতে বল লাগার মূল্য দিয়েছে ডর্টমুন্ড। যদিও চান রেফারির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁর দাবি ছিল হেড করে বল ক্লিয়ার করার সময়ই বলটি তাঁর হাতে লেগেছে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআরের অবশ্য চানের দাবির সপক্ষে প্রমাণ মেলেনি।
ডি ব্রুইনাই এগিয়ে দিতে পারতেন সিটিকে। বল নিয়ে একাই পৌঁছে গিয়েছিলেন গোল করার খুব কাছে। কিন্তু সেটি কর্নারের বিনিয়মে রক্ষা করেন ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক। কিন্তু তিনি জানতেন না, সেই কর্নারটিই শেষ অবধি কাল হয়ে দাঁড়াবে তাঁর দলের জন্য। ফিরতি কর্নার থেকে ফিল ফোডেন বাঁ পায়ের তীব্র শট পোস্টে লেগে ঢুকে যায় ডর্টমুন্ডের গোলে। এই গোলেই নিশ্চিত হয়ে যায় সিটির সেমিফাইনাল।
এ মৌসুমে ২০ বছর বয়সী ফোডেন সিটির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ই হয়ে উঠেছেন। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে প্রথম লেগের বিজয়েও অন্যতম গোলদাতা তিনি। ২০১৭ সালে সিটির হয়ে খেলা শুরুর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ফেইনুর্ডের বিপক্ষে, বদলি হিসেবে, কিছুটা সময়। এরপর সর্বশেষ দুই মৌসুমে নিয়মিত সুযোগও পাননি। এ মৌসুমের আগে তাঁকে ধারে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছিল সিটি। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ আনন্দিত হতেই পারে তেমন কিছু করা হয়নি দেখে। এবারের মৌসুমে ফোডেন গোল করেছেন ৬টি, অ্যাসিস্ট তাঁর ৫টিতে। এ মুহূর্তে তাঁকে ইংল্যান্ডের সেরা ফুটবল–প্রতিভাই বিবেচনা করা হচ্ছে।
গার্দিওলার কণ্ঠে ফোডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ঝরেছে, ‘ফোডেন কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগে দুটি গোল করে আমাদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে দিয়েছে। সে এখন সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। সে ক্ষমতাটা তাঁর ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।’
এ মুহূর্তে ফোডেন কেন সিটির গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হয়ে উঠেছেন গার্দিওলা জানিয়েছেন সেটিও, ‘সে খুবই সৃষ্টিশীল ফুটবলার। সব সময়ই মাঠে নতুন কিছু করতে চায়। সে আক্রমণভাগে যেমন দুর্দান্ত। রক্ষণেও সে একই ধরনের কার্যকর। ছোট জায়গাতে তো সে রীতিমতো অবিশ্বাস্য।’