নিজস্ব প্রতিবেদক
নগদ অর্থের পরিবর্তে সারাদেশে সামগ্রিকভাবে ‘ডিজিটাল ট্রান্সজেকশন’ চালু করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি বলেন, আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে আমরা চলে যাব ক্যাশলেস সোসাইটিতে। তখন দুর্নীতির সুযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ক্যশলেস সোসাইটি গড়ে তোলাই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রবাস থেকে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে অর্থ পাঠানোর মাধ্যম ‘ব্লেজ’ নামের একটি সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সোনালী ব্যাংক, হোমপে ও আইটিসিএল-এর যৌথ উদ্যোগে ‘ব্লেজ’ সার্ভিস যাত্রা শুরু করেছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘দেশের ৫ কোটি মানুষের কিন্তু কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। তারা সম্পূর্ণ ক্যাশের ওপর নির্ভরশীল। তবে এই ক্যাশ টাকা তো চুরি হতে পারে। সরকার থেকে যারা বেতন পায়, ভাতা পায়— ক্যাশ টাকায় অনেকে তাদের ক্ষতি করতে পারে। তাদের টাকা লুটে নিতে পারে। দুর্নীতির সুযোগ থাকে। আমরা যখন ক্যাশলেস সোসাইটিতে চলে যাব, দুর্নীতির সুযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এখন সরকারি যত ভাতা দেওয়া হয় সেটা কিন্তু সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হয়। তাতে আগে যারা গ্রামে এই টাকা বিতরণ করবে, তাদের টাকা চুরি করার সুযোগ থাকত, আমরা সেই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে আরও সহজ এবং উন্নত করা জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এর সবচেয়ে বড় লাভ পেয়েছি গত ১৭ মাসে করোনা মহামারির সময়। অন্যান্য দেশের সরকার, ধনী ধনী দেশের সরকার বসে গেছে। তাদের পক্ষে সরকার পরিচালনা সম্ভব হয়নি। তাদের স্কুল পরিচালনা বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ তাদের ডিজিটাল সিস্টেম ছিল না। বাংলাদেশে কিন্তু আমরা ডিজিটাল পদ্ধতির প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিয়েছি।
দেশের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেয়ার কথা জানিয়ে জয় বলেন, ভিডিও কনফারেন্স আমরা বহু বছর আগেই শুরু করেছি। ই-নথি কার্যক্রম শুরু করি। করোনা আসার পর এই সেবাগুলোর ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যায়। আমরা সব স্কুল-কলেজে ডিজিটাল ল্যাব করেছি। সব হেলথ ক্লিনিকে আমরা ডাক্তারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম বসিয়েছি। এই মহামারির সময় দ্রুত আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলে যেতে পেরেছি। ফলে দেশের অর্থনীতিতে সেরকমভাবে করোনার প্রভাব পড়েনি।
কেবল আজকের প্রয়োজনে নয়, দেশের ভবিষ্যতে কী প্রয়োজন হবে, সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের নজর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সারাক্ষণ ভাবছি, সারাক্ষণ চিন্তা করছি, আমাদের সারাক্ষণের পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলাদেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই। আজ থেকে ১০ বছর পর বাংলাদেশ কেমন হবে— এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের ভিশন।’
এ সময় সহজেই এবং দ্রুত যাতে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাতে পারে সেই লক্ষ্য সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে জয় বলেন, গার্মেন্টেসের চেয়েও কিন্তু বেশি আয় আসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে রেমিট্যান্স পাঠানোর পদ্ধিতি অনেক উন্নত করেছে। অনেকগুলো জায়গায় রেমিট্যান্স সেন্টার খুলেছে। কিন্তু সেখানে টাকা পাঠানোর সময়ে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আজকের ডিজিটাল এই যুগে এই লিমিটেশনের কোনো প্রয়োজন নেই। সেজন্যই আজকে ব্লেজ সার্ভিসের উদ্বোধন। ব্লেজের মাধ্যমে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ৫ সেকেন্ডের মধ্যে টাকা যোগ হয়ে যাচ্ছে। ব্লেজ হচ্ছে ক্যাশলেস সোসাইটির একটি অংশ। এই সেবাটির উদ্বোধন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য আজ একটি আনন্দের দিন। করোনাকালে ১১ হাজার দফতর পেপারলেস অফিস করেছে। দেড় কোটি ই-ফাইল সম্পাদন করা হয়েছে। করোনকালে আমরা ভার্চুয়াল কোর্টে চলে গিয়েছি। সাড়ে তিন কোটি মানুষ ভ্যাকসিনের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছে। ব্লেজ মানে জ্বলজ্বল করা। এই সেবাটিও প্রবাসীদের কাছে জ্বলজ্বল করবে— এমনটিই প্রত্যাশা।
বিএসডি/এমএম