আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে আলোচনায় বসতে চলেছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সাথে দ্বি-বার্ষিক মহাপরিচালক পর্যায়ে আলোচনার জন্য সোমবার নয়াদিল্লি পৌঁছেছে। মঙ্গলবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই আস্থার ঘাটতির কারণে সীমান্তে উত্তেজনার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। কিন্তু এখন এই আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আলোচনায় বিএসএফ সদস্য এবং ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশি নাগরিকদের “সাম্প্রতিক হামলা ছাড়াও বাংলাদেশে ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিষয়গুলো” উত্থাপন করবে ভারত।
তার মতে, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ এবং বেড়া নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে চলেছে। তার দাবি, বাহিনীর সদস্যদের আরও ভালোভাবে পাহারা দিতে সক্ষম হওয়ার জন্য সীমান্ত অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে হবে। তাই সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং আস্থা সৃষ্টির বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকর বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পটপরিবর্তনের পর এই প্রথম বার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা বৈঠকে বসতে চলেছেন।
সেই লক্ষ্যে সোমবার বিমানে দিল্লিতে পৌঁছেছে বিজিবির প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আশরাফ-উজ-জামান সিদ্দিকি। মঙ্গলবার বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) দলজিৎ সিং চৌধুরির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে অবস্থানের কথা রয়েছে বিজিবি প্রতিনিধি দলের। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারে বিজিবির প্রতিনিধিদল।
এনডিটিভি বলছে, যেহেতু ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর এটি দুই দেশের মধ্যে এই ধরনের প্রথম বৈঠক, তাই উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “এটি দ্বি-বার্ষিক আলোচনা। এই আলোচনাটি গত বছরের নভেম্বরে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাংলাদেশের অনুরোধে সেসময় এটি স্থগিত করা হয়।”
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে এই আলোচনাটিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ভারত গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাগত বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, “গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রতি ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উষ্ণতা দেখিয়েছে। আর এটি এমন এক পরিবর্তন যা ভারতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং ভারত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি উত্থাপন করেছে।”