অভিষেক রাঙিয়েছেন ওলি রবিনসন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে অভিষিক্ত এই পেসার দুই ইনিংস মিলিয়ে দলের সেরা বোলার ছিলেন, পেয়েছেন সাত উইকেট। এক ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন, দলের বিপদে ৪২ রান করে সে দায়িত্বও ভালোই পালন করেছেন। এমন এক খেলোয়াড়কেই কিনা পরের টেস্টে আর দেখা যাবে না!
চোট পাননি রবিনসন, কিংবা বর্তমানের মূল মাথাব্যথা করোনার বিধিও ভাঙেননি। তবু তাঁর বাদ পড়ার কারণ, ৮ বছরেরও বেশি আগে করা কিছু জাতিবিদ্বেষী টুইট। ১৮ পেরোনো রবিনসন জাতি-ধর্ম ও নারীবিদ্বেষী বেশ কিছু টুইট করেছিলেন সে সময়। হঠাৎ করে ভুলে যাওয়া সেসব টুইটের খোঁজ মিলেছে ইংল্যান্ড দলে তাঁর অভিষেকের পর। আর তাতেই ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) রবিনসনকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
রবিনসনকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তাঁর ধারণা, এত কড়া শাস্তি দিয়ে বাড়াবাড়ি করছে ক্রিকেট বোর্ড।
লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন রবিনসন। এর মধ্যেই তাঁর ২০১২ ও ২০১৩ সালের কিছু পুরোনো টুইট ছড়িয়ে পড়ার পর ঝড় ওঠে। তীব্র সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। এ ব্যাপারে রবিনসন ক্ষমাও চেয়েছেন টেস্ট চলাকালে। মানসিক এই চাপ সামলেই ব্যাটিংয়ে নেমে ৪২ রান করেছেন। আবার দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডারে ধস নামিয়ে ২৬ রানে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবু জাতিবিদ্বেষী আচরণের ব্যাপারে কঠোর হতে ক্রিকেট বোর্ড আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁকে নিষিদ্ধ করেছে।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রবিনসনকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এদিকে ব্রিটিশ ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসচিব অলিভার ডাউডেন এ শাস্তি মানতে পারেননি। ডাউডেন গতকাল সোমবার ক্রিকেট বোর্ডকে শাস্তির ব্যাপারে আরেকবার ভাবতে বলেছেন, ‘ওলি রবিনসনের টুইট ভুল ছিল এবং খুবই বাজে ছিল। কিন্তু সেগুলো প্রায় এক দশক পুরোনো এবং একটা কিশোর ছেলে লিখেছে। সেই কিশোর এখন পূর্ণবয়স্ক মানুষ এবং সঠিক পথে ক্ষমা চেয়েছে। তাঁকে নিষিদ্ধ করে ইসিবি বেশি বাড়াবাড়ি করেছে, ওদের আরেকবার ভাবা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও ডাউডেনের পথে হাঁটছেন। তাঁর ধারণা, কিশোর বয়সে যা করেছেন, তাঁর জন্য এখন এত বড় শাস্তি পাওয়া ঠিক না রবিনসনের। এক মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘অলিভার ডাউডেন যেমন বলল, এই মন্তব্যগুলো এক দশক আগে একটা কিশোর করেছিল এবং এর জন্য ক্ষমাও চেয়েছে।’
এদিকে জনসনের এই সমালোচনার একটু পরই কাল আরেকটি খবর ধাক্কা দিয়েছে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডকে। এরই মধ্যে গতকাল আরেকটি পুরোনো টুইটের হদিস মিলেছে। বর্তমান ইংল্যান্ড দলে খেলছেন—এমন ক্রিকেটারের জাতিবিদ্বেষী এক টুইটের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তদন্তও শুরু করে দিয়েছে বোর্ড। উইজডেন এরই মধ্যে সে টুইট প্রকাশ করেছে। তবে টুইট করার সময় খেলোয়াড়ের বয়স মাত্র ১৬ হওয়ায় তাঁর পরিচয় লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বোর্ড জানিয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, একজন ইংলিশ ক্রিকেটার তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঐতিহাসিক আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। আমরা ব্যাপারটা দেখছি এবং সময় হলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।’