নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অর্থনীতির সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিকাশ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ক্ষুদ্রঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলেও, ক্ষুদ্র উদ্যোগের উন্নয়নের জন্য আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলা, সুযোগের বৈষম্য কমানো এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে আয়োজিত ‘ক্ষুদ্র উদ্যোগ, বৃহৎ ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে ক্ষুদ্র উদ্যোগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাবেক পরিচালক ড. সেলিম জাহান।
ড. সেলিম জাহান তার বক্তব্যে বলেন, মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের সাহস যোগাতে হবে এবং স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিকাশ দ্রুত হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
উন্নয়নের গতানুগতিক ধারণার সমালোচনা করে ড. সেলিম জাহান বলেন, শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নকেই উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে দেখা উচিত নয়। বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়ানো বা নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ নিঃসন্দেহে অগ্রগতি। তবে প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সাধিত হবে যখন শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং পিছিয়ে পড়া শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। তাই, উন্নয়নের ধারণাকে আরও বিস্তৃতভাবে দেখতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। এর জন্য সহিংসতা ও সন্ত্রাস দমন এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। এই বিষয়ে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য সকলের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ড. জাহান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, পিকেএসএফ বর্তমানে দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সৌদি আরবে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পিকেএসএফের একটি প্রকল্পের সাফল্য বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) অর্থায়িত প্রায় ৭০০ প্রকল্পের মধ্যে পিকেএসএফের আরেকটি প্রকল্প দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে।
পিকেএসএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, পিকেএসএফ বর্তমানে দেশের প্রায় ৪০ লক্ষ ক্ষুদ্র উদ্যোগে অর্থায়ন করছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা, কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন এবং মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে আরও বেশি অবদান রাখার জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পিকেএসএফ তার কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী, বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল এবং এমআরএর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন ক্ষুদ্র উদ্যোগের গুরুত্ব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এর অপরিহার্য ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।