নিজস্ব প্রতিবেদক
খুলনার কয়রা উপজেলার আলোচিত তিন খুনের রহস্য প্রায় আড়াই মাস পর উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রতিবেশী নারীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ার জেরে পরিকল্পিতভাবে প্রথমে স্ত্রী, মেয়েকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর স্বামীসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে পাশ্ববর্তি পুকুরে ফেলে দেয় খুনিরা।
সোমবার দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান তার সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত ২৬ অক্টোবর উপজেলার বামিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী বিউটি বেগম ও মেয়ে হাবিবা সুলতানা টুনির লাশ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই দিন সন্ধ্যায় নিহত হাবিবুরের মা কোহিনুর খানম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে কয়রা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি প্রথমে কয়রা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি উজ্জ্বল কুমার দত্ত আলোচিত মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। পাশাপাশি জেলা পুলিশের ট্রেনিং এ্যান্ড আইটি শাখার ইনচার্জ এজাজ শফি মামলাটির ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখেন।
গ্রেফতার হওয়া শামীমুল ইসলাম অঞ্জন (উপরে বা দিক থেকে), আল আমিন হোসেন, মোস্তফা কামাল, তাসলিমা, মো. সাইফুল ইসলাম বাবলু। শামসুর রহমান (নিছে বা দিক থেকে), আবদুল ওহাব ওরফে হক, আব্দুর রশিদ গাজী, মো. জিয়াউর রহমান জিয়া, রাজিয়া সুলতানা। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চাঞ্চল্যকর এ মামলার অন্যতম আসামি আবদুর রশিদ গাজী ও জিয়াউর রহমানসহ মোট ১৪ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর রশিদ গাজী পলাতক ছিলেন। তাকে ৮ জানুয়ারি যশোর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে আরও ৬ জনকে পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রশিদ গাজী আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রশিদ গাজী জানিয়েছেন, একই গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান ও রাজিয়া সুলতানার পরকীয়া প্রেমে হাবিবুল্লাহ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুলতানার স্বামী কুদ্দুস গাজী খুলনা শহরে কাঁচা মালের ব্যবসার সুবাদে বাড়িতে কম যাতায়াত করেন। এ সুযোগে জিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। রাজিয়া সুলতানা হাবিুল্লার প্রতিবেশি হওয়ায় তার চোখে বিষয়টি ধরা পড়ে।
এ কারণে তিনি তাদের পরকিয়ায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। ঘটনার বছর খানেক আগে জিয়াকে হাতেনাতে ধরে ফেলার পর সুলতানা ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবুরকে বটি দিয়ে কোপ মারে। পরে এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে জিয়াউর হাবিবুল্লার উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন সময় সে হাবিবুরকে শায়েস্তা করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা আটতে থাকে। পরে জিয়াউর ও রশিদের নেতৃত্বে গত ২৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধে। এরপর মা-মেয়েকে ধর্ষণের পর তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ছয়জন সরাসরি অংশ নেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, বিকৃত যৌন লালসা, প্রতারণামূলক আর্থিক লেনদেন ও পরকীয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে দলবদ্ধভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. জিয়াউর রহমান জিয়া, রাজিয়া সুলতানা, শামসুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম বাবলু, আল আমিন হোসেন, আসলাম সরদার, আবদুল ওহাব ওরফে হক, তাসলিমা, শামীমুল ইসলাম অঞ্জন, আব্দুর রশিদ গাজী ও মোস্তফা কামাল।
বিএসডি/এসএ