নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈচিত্রময় পার্বত্য খাগড়াছড়ির আলুটিলা-রিছাং-গিরি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ব্র্যান্ডবুক ২য় সংস্করণ মোড়ক উন্মোচন করেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার প্রশান্ত চক্রবর্তী। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, বই মানুষকে কিংবা কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে জ্ঞানে গুণে সমৃদ্ধশালী করতে সর্বাত্মক সাহায্য করে থাকে। আজকে এখানে যে বইটি আমরা মোড়ক উন্মোচন করেছি, এটা নিঃস্বন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ। এটা নিঃস্বন্দেহে এখানকার মানুষ তো নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ জানার সুযোগ তৈরি হবে খাগড়াছড়ি সম্পর্কে। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। উনার এই সুন্দর উদ্যোগের ফলে আজ আমরা “বৈচিত্রময় খাগড়াছড়ি “বইয়ে এ জেলার সংস্কৃতি, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর জীবন জীবিকা সম্পর্কে জানবো। এখানকার যা কিছু জানা কিংবা চেনার আছে, সবকিছু এই বইয়ের মাধ্যমে জানা এবং চেনার সহজ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। খাগড়াছড়ি সম্পর্কে যারা জানেনা, তারা বইটি দেখলেই জানতে পারবে এবং বুঝতে পারবে। তিনি আরো বলেন, আলো যেমন জাগতিক নিয়মে অন্ধকার দূর করে সব কিছু মূর্ত করে, তেমনি বই মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করে চেতনার আলোকে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে দেখায়। আলো শুধু ভৌগোলিক ভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে। আর বই অতীত থেকে ভবিষ্যৎ, নিকট থেকে দূরে, প্রান্ত থেকে অন্তে এমনকি যুগ থেকে যুগান্তরে জ্ঞানের আলোকে পৌঁছে দিতে পারে। তাই দেশ কালের সীমানা অতিক্রম করে জ্ঞানের আলোকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে একমাত্র বই। শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল আত্মশিখন। আর বই সেই আত্মশিখনের শ্রেষ্ঠ সহায়ক। বিনোদন থেকে শিক্ষা, অবসর যাপন থেকে নিঃসঙ্গতা দূর, সবেতেই বই শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হতে পারে। তিনি আরো বলেন, একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন, সেটি অন্য কিছু দিয়ে না বৌঝা গেলেও তার বইয়ের পড়ার ধরন এবং বইয়ে লেখা সম্পর্কের ধরণ দেখে তা অনেকাংশেই জানা যায়। আজ বৈচিত্রময় খাগড়াছড়ি বইয়ে ধরনও আমরা নিঃস্বন্দেহে অনেক কিছু জানার এবং শেখার আছে। যা ইতিপূর্বে আমরা মোড়ক উন্মোচন করেছি। আমরা এই বইয়ের মাধ্যমে খাগড়াছড়িকে চিনবো, এ জেলা সম্পর্কে জানার সহজ মাধ্যম হবে “বৈচিত্রময় খাগড়াছড়ি” নামক বইটি। অনুষ্ঠানে সভাপতি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস’র বাণীতে জানা যায়ী,খাগড়াছড়ি একটি পর্যটন জেলা হিসেবে সুপরিচিত। এ জেলায় রয়েছে ছোট ছোট নদী,প্রাকৃতিক ঝর্ণা, ছড়া, গিরি, সবুজ বন-বনানী বেষ্টিত অন্যন্য সাধারণ ভূ-প্রাকৃতিক আর বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি যা এ অঞ্চলকে ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।প্রতি বছর প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে আর এই পড়) পর্যটন শিল্পের আয় এই জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা পালন করছে।প্রাকৃতিক ঝর্ণা,হাতিমাথা পাহাড়(ত্রিপুরা ভাষায়”মায়ু কপাল হাপং”), হেরিটেজ পার্ক,জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক,দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝর্ণা, ধুমুনি ঘাট তীর্থ কেন্দ্র,দেবতা পুকুর (“মাতা পুখিরি”ত্রিপুরা ভাষায়), মানিকছড়ি রাজবাড়ি, শান্তিপুর অরণ্য কুটির,মায়াবিনি লেক,জলপাহাড়,মায়াকানন-সহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। এ জেলার অধিবাসীদের জীবনমানের উন্নয়নে বিকাশমান পর্যটন শিল্পের ভূমিকা এবং পর্যটন শিল্পের অনন্য সম্ভাবনার কথা বিবেচনায়”আলুটিলা-রিছাং-গিরি, বৈচিত্রময় খাগড়াছড়ি’স্লোগানকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি জেলার জেলা ব্র্যান্ডিং হিসেবে ‘পর্যটন-কে গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটের আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে জেলা প্রশাসন নিরলজভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই জেলা ব্র্যান্ডবুক প্রকাশনা পর্যটন শিল্পের বিকাশে খাগড়াছড়ি জেলার সম্ভাবনা এবং জেলার অধিবাসীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আশা করছি। কালের পরিক্রমায় সময়ের গন্ডি পেরিয়ে বয়ে চলা এ জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্ব-মহিমায় ও স্বকীয় সত্ত্বায় ভাস্বর হয়ে উঠুক বৈচিত্রময় খাগড়াছড়ি। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,জেলা পুলিশ সুপার মো: আবদুল আজিজ। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা সমবায় অফিসার আশীষ কুমার দাশ, জেলা শিশু একাডেমির কর্মকর্তা উষানু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ত্রিনা চাকমা, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জিতেন বড়ুয়া, সাপ্তআহিক আলোকিত পাহাড় পত্রিকার সম্পাদক মুহাম্মদ সাজুসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ।
বিএসডি/জেজে