নিজস্ব প্রতিবেদক:
লিভার সিরােসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে বলে জানিয়েছে লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ (এএসএলডিবি)। সেক্ষেত্রে তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে পরবর্তী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের যথেষ্ট সচেষ্ট থাকারও পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংগঠনটির সভাপতি ও সাবেক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা সক্রান্ত বিষয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করা ও জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য সঠিক চিকিৎসার বিষয়ে যথাযথ আলােকপাত করা দরকার।
এতে আরও বলা হয়, লিভার সিরােসিসে আক্রান্ত রােগীদের ক্ষেত্রে পাের্টাল হাইপারটেনশনজনিত বিভিন্ন কারণ, যেমন- ইসােফেজিয়াল ভ্যারিক্স, গ্যাস্ট্রিক ভ্যারিক্স, গ্যাস্ট্রিক এন্ট্রাল ভাসকুলার একটাশিয়া ইত্যাদি থেকে খাদ্যনালী ও পাকস্থলীতে রক্তপাত হতে পারে। ইসােফেজিয়াল ভ্যারিক্স হতে রক্তক্ষরণ বন্ধে ইসােফেজিয়াল ভ্যারিসিয়াল লাইগেশন (ইভিএল) একটি বহুল ব্যবহৃত স্বীকৃত চিকিৎসা। বারবার রক্তক্ষরণ বন্ধের ক্ষেত্রেও ইভিএল করা যায়। এছাড়া পাের্টাল হাইপারটেনশনের কারণে বারবার রক্তক্ষরণ এবং যথাযথ মাত্রার ওষুধ প্রয়ােগের পরেও বারবার আসা পেটের পানির (রিফ্র্যাক্টরি এসাইটিস) চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ট্রান্সজগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পাের্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস) করা যায়।
চিকিৎসায়নঝুঁকি প্রসঙ্গে আরও বলেন, টিপসের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পরবর্তী জটিলতা বিশেষ করে হেপাটিক এনসেফালােপ্যাথি অর্থাৎ লিভার রােগ জনিত কারণে অজ্ঞান হওয়ার প্রবণতা বা অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এছাড়াও টিপস করার সময় হার্টের জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং শিরা পথে ডাই ব্যবহারে কিডনির জটিলতা বহু মাত্রায় বাড়তে পারে। অর্থাৎ টিপস করার সময়েও হার্ট ডিজিজ বা কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত রােগীদের প্রসিডিউরজনিত জটিলতার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে পরবর্তী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের যথেষ্ট সচেষ্ট থাকা প্রয়ােজন বলে মনে করেন তারা।
এর আগে ২৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে ৩ বার রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ পর্যন্ত সামাল দেওয়া গেছে। বর্তমানে ম্যাডাম এমন একটা অবস্থায় আছেন, যেখানে ফের রক্তক্ষরণ হলে তার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে।
তারা বলেন, শুধু বাংলাদেশে না, পুরো উপমহাদেশের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর আগেও বলেছি, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যতবারই অসুস্থ হয়েছেন, ততবারই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যান।
খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি বর্তমানে যে অবস্থয় আছে, সচরাচর এমন রোগী পাওয়া যায় না বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক। তারা বলেছেন, এ রোগের চিকিৎসা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিতেও পর্যাপ্ত নেই। কিছু বিশেষায়িত কেন্দ্রের চিকিৎসা হয়। সাধারণত সারা বিশ্ব থেকে রোগীদের সেখানে নেওয়া হয়।
এরপর সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিতৎসকরাই এ রোগের বিশ্ব মানের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম।