আন্তর্জাতিক ডেস্ক
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত করতে অক্ষম কোনো অস্থায়ী বিরতি আর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চালু করা সম্ভব নয়। উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবেইদা এই অভিমত দিয়েছেন।
বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে আবু উবেইদা বলেন, “হামাস ইতোমধ্যে বেশ কয়েক বার গাজায় অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত দিতে চেয়েছে, তার পরিবর্তে চেয়েছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। কিন্তু প্রতিবারই হামাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।”
“আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে গাজার বাসিন্দারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত করতে অক্ষম— এমন কোনো অস্থায়ী বিরতি আর উপত্যকায় কার্যকর হবে না।”
প্রসঙ্গত, চলতি জুলাইয়ের শুরুর দিকে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া পরিকল্পনা এই যুদ্ধের দুই বিবদমান পক্ষ হামাস ও ইসরায়েল এবং দুই মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের কাছে পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। বিরতির এই সময়ে হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে অন্তত ১০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস। এছাড়া মৃত ১৮ জন জিম্মির দেহও হস্তান্তর করবে।
বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল এবং যুদ্ধবিরতির সময়ে গাজায় ত্রাণ ও খাদ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে নেতানিয়াহু রাজি হয়েছেন; আর হামাস প্রথম দিকে সম্মতি জানালেও এখন বেঁকে বসেছে। গোষ্ঠীটির বক্তব্য, এই বিরতি গাজায় বসাবসরত ফিলিস্তিনিদের কোনো কাজে আসবে না; কারণ এর আগেও অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় বিরতির শর্ত ভেঙে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শুক্রবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ লিও নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক ফোনালাপে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার জন্য জোর আহ্বান জানান। জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং এটি কার্যকর করার জন্য চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু হামাস এখনও এ ইস্যুতে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
২০২৩ সালের সাত অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পর ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে আসে হামাস যোদ্ধারা। অতর্কিত এই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলের সেই অভিযান এখনও চলছে এবং অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৮ হাজার ৭০০ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের প্রচেষ্টায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি—দু’বার গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই বিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শুক্রবারের বক্তব্যে আবু উবেইদা বলেন,“যদি শত্রুপক্ষ একগুঁয়ে থাকে এবং অন্যান্যবারের মতো এবারও বিরতির মেয়াদ ভেঙে ফের হামলা শুরুর পরিকল্পনা করে থাকে— তাহলে আমরাও অস্থায়ী চুক্তিতে সম্মত হওয়া কিংবা ১০ জন বন্দিকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিতে পারি না।”
সূত্র : রয়টার্স