বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান ’গার্ড অব অনার’-এ নারী কর্মকর্তাদের পরিবর্তে পুরুষ কর্মকর্তার নেতৃত্ব প্রস্তাব করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। এই প্রস্তাব সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং নারী অবমাননা বলে মন্তব্য করেছেন ওই শরিক দলগুলোর নেতারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে সম্মান জানানো হয়, সেখানে জেলার প্রধান সরকারি কর্মকর্তা ডিসি এবং উপজেলার প্রধান সরকারি কর্মকর্তা ইউএনও নেতৃত্ব দেন। যেখানে ওই কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী থাকবেন সেখানে ওই নারী কর্মকর্তার পরিবর্তে গার্ড অব অনারে বিকলপ কোনো পুরুষ কর্মকর্তার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত রোববার (১৩ জুন) কমিটির সভায় আনা এ প্রস্তাবের পেছনে ধর্মীয় কারণ দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। ১৪ দলসহ নারী সংগঠনগুলো এ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিষয়টিতে সমালোচনা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
১৪ দলের নেতারা বলছেন, এই প্রস্তাব সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সিপাহী পর্যন্ত নারী রয়েছে, সেই দেশে এ ধরনের একটি প্রস্তাব দুঃখজনক বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
এই প্রস্তাবকে ১৪ দলের কেউ কেউ হেফাজতে ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত প্রস্তাব বলেও মন্তব্য করেন। জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠী শুধু রাষ্ট্রের ভিত্তিতে আঘাত করছে না, রাজনৈতিক দলের মধ্যেও আশ্রয় করেছে বলে তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন। তারা অবিলম্বে এই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিষয়টি নিয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত সোমবার (১৪ জুন) সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। পর দিন মঙ্গলবার (১৫ জুন) জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিণ আক্তারও সংসদে তাদের বক্তব্যে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরেও ক্ষোভ রয়েছে। তবে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
এ বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠী শুধু রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপর আঘাত করছে না, সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের মধ্যেও আশ্রয় করছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এই প্রস্তাব রাষ্ট্রীয় চেতনা, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নারী-পুরুষের সমতা বিরোধী। রাষ্ট্রীয় কাজে লিঙ্গ ভেদ থাকে না। রাষ্ট্রে কোনো লিঙ্গ নেই। এই প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বিস্ময়কর প্রস্তাব, বিস্মিত হয়েছি। এটা সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি, সাংঘর্ষিক। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সিপাহী পর্যন্ত নারী আছেন, সেখানে এই প্রস্তাব নারীরর প্রতি অবমাননা, এটা অপ্রত্যাশিত। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন হেফাজতের সঙ্গে সখ্যতা রেখেছিলো, হেফাজতের আছরে থেকে রাজনীতি করছে। এই প্রস্তাবে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। এটা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে জনগণ বিহিত করবে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, এই ধরনের প্রস্তাব সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য বাড়িয়ে দেয়। এই প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি ও সংবিধান বিরোধী। এই জাতীয় কথা বলে কোনো বিতর্কের মধ্যে না যাওয়াই ভালো। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা উচিত হবে।