আলিফ;
আকাশজুড়ে পাঁজা পাঁজা মেঘ। দূরে আরও দূরে সবুজ পাহাড়। নীল, কমলা, লাল, ছাই রঙের খেলা যেন। মনে হচ্ছে শিল্পী তাঁর জাদুর তুলি দিয়ে এক এক টানে যেন এক এক রং দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছেন প্রকৃতি। হঠাৎ পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে একটা চান্দের গাড়ি ভর্তি তরুণ পর্যটক। গলা ছেড়ে গাইছে, ‘ভালো আছি, ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো…’।
চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর বান্দরবানের কথাই তো বলছিলাম। বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম স্থান বান্দরবানে অবস্থিত। সেগুলো হচ্ছে তাজিনডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং।
বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ শৈল প্রপাত মিলনছড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং বান্দরবান থেকে থানচিগামী সড়কের চার কিলোমিটারের মধ্যেই। বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে নাফাখুম অন্যতম। থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা রেমাক্রিতে পাহাড় ও বনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে অবস্থান নাফাখুমের। নাফাখুম আবার রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। এখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাহনও বান্দরবান জেলা শহরেই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের প্রশস্ততম জলপ্রপাতগুলোর একটি হলো বান্দরবানের জাদিপাই। এটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং চূড়া থেকে হেঁটে জাদিপাই জলপ্রপাতে পৌঁছতে হলে ঘণ্টাখানেকের পথ অতিক্রম করতে হবে।
অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক হ্রদ বগা লেক। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বগা লেকের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই লেক। বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরের আরেক নাম বান্দরবান স্বর্ণমন্দির। বান্দরবান থেকে ১০ কিলোমিটার এবং বালাঘাটা থেকে চার কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এ মন্দির অবস্থিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি। মাটি থেকে ২০০ ফুট উঁচু এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালে শেষ হয়। বান্দরবান শহর থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চড়ে বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরে যাওয়া যায়।
চিম্বুক হলো বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। এই এলাকার রাস্তাঘাট আঁকাবাঁকা ও সর্পিল। জিপে চড়ে এসব রাস্তা পার হওয়া এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। বান্দরবানের আরেক আকর্ষণ মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। বান্দরবান পার্বত্য জেলা কাউন্সিলের খুব কাছেই এটি অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কেরাণীহাট সড়কে অবস্থিত মেঘলায় রয়েছে একটি মিনি সাফারি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ের নিচে একটি কৃত্রিম লেক এবং নৌকা ভ্রমণের সুবিধা।
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাছেই নীলাচল। যা টাইগার হিল নামেও পরিচিত। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন স্পট হলো নীলাচল। এর অবস্থান টিগেরপাড়ায়। যা বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। এখান থেকে পাখির চোখে দেখতে পারবেন পুরো বান্দরবান শহরকে।
দেশের উচ্চতম ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি নীলগিরি। প্রায় ৩৫০০ ফুট উঁচু জায়গাটির অবস্থান থানচি থানায়। বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি রোডে অবস্থিত নীলগিরি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। এর কাছাকাছিই রয়েছে ম্রো আদিবাসীদের গ্রাম।
এছাড়াও বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো- শুভ্র নীলা, জীবন নগর পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট ও জাদুঘর, বাকলাই জলপ্রপাত, রিজুক জলপ্রপাত, চিংড়ি ঝিরি জলপ্রপাত, জিংসিয়াম সাইতার জলপ্রপাত, পাতাং জারি জলপ্রপাত, ফাইপি জলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, কেওক্রাডাং পাহাড়, তাজিনডং পাহাড় প্রভৃতি।
কীভাবে আসবেন
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসে সরাসরি বান্দরবানে আসা যায়। অথবা কক্সবাজার হয়ে আসতে চাইলে কক্সবাজার-বান্দরবান বাস সার্ভিস রয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম গাড়িতেও সাতকানিয়ার কেরানিহাটে নেমে বান্দরবানে সহজে আসা যায়। রাঙামাটি হয়ে রাঙামাটি-বান্দরবান রুটের বাসে চড়ে বান্দরবান আসা যায় সরাসরি।
বিএসডি /আইপি