চিত্র: মেঘের রাজ্য সাজেক
মো.ইব্রাহিম হাসান
বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে নিজের দেশে যে কয়টি ভ্রমণ গন্তব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হল সাজেক ভ্যালি। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক উইনিয়নে অবস্থিত একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্ত্র হচ্ছে সাজেক ভ্যালি। এর অবস্থান রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। সাজেক বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক নামক নদী হতে সাজেক ভ্যালির নামকরণ করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ। ভৌগোলিক অবস্থান রাঙ্গামাটিতে হলেও যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি হয়ে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগে। এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত। সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উঁচুতে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প। বিজিবি সদস্যদের সুষ্ঠ পরিকল্পনায়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের দ্বারাই বর্তমান সাজেকের এই ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভম হয়েছে। বর্তমানে সাজেকে ভ্রমণরত পর্যটকদের জন্য প্রায় সকল ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। সারা বছরই সাজেক যাওয়া যায়। সাজেকে পাহাড়ধস বা রাস্তাধস এরকম কোন ঝুঁকি নেই।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যেতে চাইলে হানিফ, শ্যামলীসহ আরও কিছু পরিবহণের বাস আছে যা দিয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত যেতে পারেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫২০-৫৫০ টাকা। সরাসরি সাজেক পৌঁছাতে চাইলে দীঘিনালা যেতে পারেন শান্তি পরিবহণের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫৮০-৬০০ টাকা করে। এছাড়াও কিছুকিছু এসি এবং ননএসি বাস আছে যা দিয়ে সাজেক পৌঁছা যায়। মানুষ সংখ্যায় বেশী হলে ঢাকা থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যেতে পারেন। কিংবা বিআরটিসি এবং সেন্টমার্টিন পরিবহণের কিছু এসি বাসও ভাড়া করে যেতে পারেন। খাগড়াছড়ি কিংবা দীঘিনালায় পৌঁছে সেখানকার কিছু জীপগাড়ী আছে যা ভাড়া করে সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন সাজেক ভ্যালি।
সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো এইসকল জীপ গাড়ীগুলোকে স্থানীয়রা চাঁন্দের গাড়ী নামে চিনে। এই জীপগাড়ী অথবা চাঁন্দের গাড়ী ভাড়া করে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালী। একদিনের বেশী থেকে সাজেক ভ্যালি ঘুরতে চাইলে ভাড়া কিছুটা বেশী লাগে এই জীপ গাড়ীগুলোর। এই গাড়ী গুলোতে খুব সহজেই ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ বসতে পারে। তবে লোকসংখ্যা যদি কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সিএনজি ভাড়া করতে পারেন। সিএনজির ভাড়া তুলনামূলক একটু বেশী পরে। তাই চাইলে আপনারা বাস কিংবা মোটর সাইকেল ভাড়া করতে পারবেন। মোটর সাইকেল পাহাড়ী এলাকায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ তাই এটা ভাড়া না করাই ভালো। সাজেক ভ্যালি একদিনে ঘুরতে চাইলে অবশ্যই সন্ধ্যার আগে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। কেননা বন্য পরিবেশ হওয়ায় যায়গাটি সন্ধ্যার পর বেশ অন্ধকার হয়ে যায়।
কোথায় থাকবেন
সাজেক ভ্যালিতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি উন্নতমানের রিসোর্ট রয়েছে। তবে রিসোর্টে থাকতে চাইলে আপনাকে গুনতে হবে বেশ মোটা অংকের টাকা। রিসোর্টের পাশাপাশি বেশকিছু হোটেলও রয়েছে। তবে সেগুলো বেশী উন্নত নয়। তাছাড়া খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় বেশ কয়েকটি পর্যটন মোটেল রয়েছে এবং এদের মান বেশ ভালো। তবে দীঘিনালার কয়েকটি গেস্ট হাউজ আছে যেগুলো বেশ আকর্ষনীয়। চাইলে আপনি এগুলাতেও থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
রিসোর্ট, মোটেল কিংবা গেস্ট হাউজে থাকলে সেখানেই উন্নতমানের খাবারের সুবিধা থাকে। এছাড়া সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে চাইলে পানখাই পাড়া নামক স্থানে গিয়েও খেয়ে আসা যায়। এর পাশেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। তাই সেখানে খেতে গেলে এই স্থানটিও ঘুরে আসা যায়। তাছাড়া আদিবাসীদের সাথে বসে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে রুইলুই ও কংলক পাড়ায় চলে যেতে পারেন। সেখানে আগে থেকে তাদের বলে দিলে তারাই আপনাকে তৈরী করে দিবে আপনার চাহিদামতো খাবার।
সাজেক ভ্যালিতে চোখে পরে মেঘের সাদার সাথে অরণ্যের সবুজের এক অপরূপ সংমিশ্রণ। তিন তিনটি হেলিপ্যাড থাকায় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপরূপ সব সৌন্দর্য খুব সহজেই দেখা যায়।
কবির ভাষায়–
‘সাঁঝের বেলা শেষে, নীল আকাশ জুড়ে ঝলঝল করে জ্বলে তারার দল
মেঘলা আকাশ স্বপ্ন বুনে, নিয়ে এক চোখে রোদ আর অন্য চোখে জল!’
ঠিক এইরকমই সাজেক ভ্যালির আবহাওয়া। কখনও গরম আবার কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি। এই বৃষ্টির পরপরই আবার একরাশ মেঘের দল সাজেককে বানিয়ে দেয় সাদা উপত্যকা। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আজই ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন এবং ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি থেকে।
বিএসডি/আইপি