পর্যটন ডেস্ক:
সবুজ জলের ওপর নীল আকাশ। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে করচসহ জালিবেত, কদম, হিজল, মূর্তাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে এই নয়নাভিরাম দৃশ্যের দেখা মেলে। মিঠা পানির অপরূপ জলাবনটির ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে মেঘালয়ের পাহাড় চমৎকার লাগে।
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় পাটি গাছ ‘রাতা গাছ’ নামে পরিচিত। এর নামানুসারে বনটির নাম রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। এর আয়তন প্রায় ৩ হাজার ৩২৫ একর। এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ। বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তখন কাচের মতো মসৃণ নিথর জলে গাছের ডালপালার প্রতিবিম্ব দারুণ উপভোগ্য।
বনের ৮০ শতাংশ এলাকাই গাছ দিয়ে ভরা। বিশাল এ বনে রয়েছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছ। জলে বুক ডুবিয়ে থাকা গাছের ডালপালায় সবুজ পত্র-পল্লব চমৎকার। গাছে গাছে দেখা যায় ঘুঘু, চড়ুই, পানকৌড়ি, চিল, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, চিল, বালি হাঁসসহ নানান প্রজাতির পাখি।
অপরূপ জলাবনের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে রাতারগুলে দর্শনার্থীদের প্রবেশ প্রায় বন্ধই ছিল। কিছু পর্যটক কড়া শর্তসাপেক্ষে বনে প্রবেশ করতে পারতেন।
১ নভেম্বর থেকে আবারও পর্যটকদের জন্য ফের উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এই জলাবন। এটি নিয়ন্ত্রণ করে সিলেট বন বিভাগ।
জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যটিতে বেড়াতে যাওয়া ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। এখন থেকে রাতারগুলে পেশাদার ক্যামেরায় শুটিং করলে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা গুনতে হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে আরও জানানো হয়, রাতারগুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্যটকদের এখন থেকে সরকারকে ফি দিতে হবে। এছাড়া যুক্ত হয়েছে নৌকা ভ্রমণ ও পার্কিং ফি।
প্রবেশমূল্য
প্রাপ্তবয়স্ক: ৫০ টাকা
১২ বছরের নিচে: ২৫ টাকা
আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী: ২৫ টাকা
বিদেশি পর্যটক: ৫০০ টাকা
ইঞ্জিনবিহীন নৌকা ভাড়া করার ফি
প্রতিবার: ১০০ টাকা
বিদেশিদের পর্যটক: ১০০০ টাকা
পার্কিং ফি
বাস বা ট্রাক: ২০০ টাকা
পিকআপ/জিপ/কার/মাইক্রোবাস: ১০০ টাকা
মোটরসাইকেল/সিএনজি: ২৫ টাকা
যেভাবে যাবেন
যেকোনও বাসেই যাওয়া যায় সিলেটে। জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা। শহর থেকে সারাদিনের জন্য গ্যাসে চালিত ইঞ্চিন ঠিক করে নিতে পারেন। ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকার মতো। ফলে ফেরার সময় গাড়ি পাওয়া নিয়ে ও কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না।
গ্যাসে চালিত ইঞ্চিন দু’পাশে সারি সারি চা বাগানের অনন্য সৌন্দর্য দেখে রাতারগুল ঘাটে পৌঁছাতে ৪০ মিনিট লাগে। ঘাটে ডিঙি নৌকা ভাড়া করে নিতে হবে। সরকার নির্ধারিত নৌকা ভাড়া ৭৫০ টাকা হলেও মাঝিরা বেশি নেয়। দরদাম করে নেওয়া ভালো।
রাতারগুল ক্যাম্পিং সাইট থেকে নৌকা কিংবা কায়াকিং করে যাওয়া যায় জলাবনে। বনের মাঝে একটি নৌকায় ভাসমান দোকান আছে। সেখানে কফিতে চুমুক দিতে পারেন।
বিএসডি/আইপি