নিজস্ব প্রতিবেদক,
‘আমাদের সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলেই করছি। আমরা কোনো আর্থিক দুর্নীতি করিনি। শুধুমাত্র আপনাদের (গ্রাহকের) সহযোগিতা পেলে এই ই-কমার্স বিজনেস থেকেই ইভ্যালি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে এসব কথা বলেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল। সেখানে তিনি ইভ্যালিকে আরেকটু সময় দিতে গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এদিকে আলোচিত সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ যমুনা। কিন্তু সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে আসে শিল্প গ্রুপটি। এছাড়া ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির নামে পরিচালিত সব অ্যাকাউন্টের তথ্য ও ৫০ লাখ বা তার বেশি টাকা লেনদেনের চেক ও রশিদের কপি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে সহযোগিতা চেয়ে স্ট্যাটাস দেন ইভ্যালির এমডি রাসেল।
স্ট্যাটাসে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী লেখেন,‘এই গ্রুপ থেকে জানতে পারবেন আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম। স্বীকার করছি, এটা সন্তোষজনক নয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমরা শুধুমাত্র আপনাদের সহযোগিতা পেলে ই-কমার্স বিজনেস থেকেই ইভ্যালি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
ক্রেতা ও গ্রাহকদের উদ্দেশ্য করে রাসেল বলেন, ‘আমাদের এখানে হয়ত আপনার অর্ডার নেই। আমরা অনেকের ডেলিভারি দিতে পারছি না দেখে হয়ত আপনি নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। আমাদের সকল ট্রানজেকশন ব্যাংকিং চ্যানেলেই করেছি। আমরা কোনো আর্থিক দুর্নীতি করিনি। আমাদের ঘাটতি হয়েছে পণ্যে ডিসকাউন্ট দিয়ে ই-কমার্সের প্রতি মানুষকে আকর্ষণ তৈরি করার জন্য। হয়ত আমাদের কোনো ব্যবসায়িক ভুল থাকতে পারে। কিন্তু এই ব্যবসায়িক ভুল সঠিক ব্যবসায়িক পদ্ধতি দিয়ে আমরা সমাধান করব। আমি শুধু ৬ মাস সময় চেয়েছি। আর বাকি ৫ মাস।
সবশেষ ২৭ আগস্ট ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির নামে পরিচালিত সব ধরনের অ্যাকাউন্টের তথ্য ও ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি লেনদেনের চেক বা রশিদের কপি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটি ব্যাংকগুলোকে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তথ্য পাঠাতে বলা বলেছে।
গত বছর আগস্টে ইভ্যালি এবং এর চেয়ারম্যান ও এমডির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই মধ্যে প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জে মামলা করা হয়েছে।
এর আগে ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।
এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
১৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সম্পদ ও দায়ের হিসাব দেয় ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তার নিজের ব্র্যান্ড মূল্য ৪২৩ কোটি টাকা। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল কোম্পানিকে দিয়েছেন। বাকি ৫৪৩ কোটি টাকা হচ্ছে কোম্পানিটির চলতি দায়।
ইভ্যালি জানায়, দায়ের বিপরীতে তাদের চলতি সম্পদ রয়েছে ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর সম্পত্তি, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি মিলিয়ে রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে স্থাবর সম্পত্তি দাঁড়ায় ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা থেকে স্থাবর সম্পত্তি ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাদ দিলে বাকি থাকে ৪৩৯ কোটি টাকা, যাকে ইভ্যালি বলছে তার অস্থাবর সম্পত্তি।
বিবরণী মেলাতে ইভ্যালি দেখিয়েছে অস্থাবর সম্পত্তি ৪৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪২৩ কোটি টাকা হচ্ছে তার ব্র্যান্ড মূল্য, আর ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা হচ্ছে অদৃশ্যমান সম্পত্তি।
সব মিলিয়ে ইভ্যালির মোট দেনার পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। এই দেনার বিপরীতে তাদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য মোট সম্পদ রয়েছে ৫৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা।
বিএসডি/আইপি