নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রাথমিকের পর এবার মাধ্যমিকেও শিগগিরই পুরোদমে ক্লাস শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মাধ্যমিকের পাঠদান স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় দূতাবাসের উদ্যোগে ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া এডুকেশন ফেয়ার-২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় মাধ্যমিক পর্যায়ে সপ্তাহের সব দিন ক্লাস রাখা হয়নি। তবে আশা করছি এ মাসের মাঝামাঝি থেকেই আমরা মাধ্যমিকে পুরোদমে ক্লাস শুরু করতে পারব। এখন শ্রেণীভিত্তিক রুটিনে সীমিত সংখ্যায় ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত ক্লাস হচ্ছে। আমরা ধারাবাহিক মূল্যায়নে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট দরকার হলে সেটাও দেয়া হবে। সব মিলিয়ে মাধ্যমিকের পাঠদান স্বাভাবিক পর্যায়ে নিতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
মিশ্র পদ্ধতিতে (ব্লেন্ডেড লার্নিং) পাঠদান বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা একটি জাতীয় নীতি করছি। মাসের ২৬ তারিখ সেটা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হবে। এরপর এ নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা ঠিক করা হবে। খুব জোরেশোরেই এটার কাজ এগিয়ে চলছে। পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে মিশ্র পদ্ধতির পাঠদান কীভাবে শুরু করা হবে সে বিষয়েও কাজ চলছে। কারণ এ পদ্ধতি চালু করতে হলে আমাদের ক্লাসরুমগুলোকে বিশেষভাবে তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদেরও যথাযথ প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়েও কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস করে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আমি আবারো কথা বলব।
মহামারীর কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া যৌক্তিক বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, যেখানে আমরা পুনর্বিন্যাস করে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েছি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষাটাও সেই পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে হওয়া উচিত, সেটাই যৌক্তিক।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও তখন স্বল্প পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। সে সময়ও সব শিক্ষার্থীকে স্কুলে নেয়া হয়নি। রুটিন করে, আলাদা সময়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিল। তবে দেশে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার শুরু হলে সশরীরে শ্রেণীকক্ষের কার্যক্রম আবার বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে এক মাস কেবল আগের মতো অনলাইনে ক্লাস নেয়া হয়।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে দুই ডোজ কভিড প্রতিরোধী টিকা পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাস শুরু হয়। বর্তমানে সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস হচ্ছে।
এর মধ্যে ২ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হয়। প্রাথমিকে প্রতিদিনই ক্লাস নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা এখনো অনলাইনেই ক্লাস করছে। ২০ মার্চের পর থেকে তাদের শ্রেণীকক্ষে ফেরার কথা রয়েছে। সে হিসেবে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে মাধ্যমিকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই মার্চের শেষ নাগাদ সপ্তাহে প্রতিদিন স্কুলে যেতে শুরু করবে।
বিএসডি/ এফএস