আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। শক্তিশালী টেলিস্কোপে চোখ রেখে চাঁদের দিকে তাকালে একে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানো একটি প্রাণহীন শীতল প্রস্তরখণ্ড বলেই মনে হবে।
উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে চাঁদে প্রাণের বিকাশ ঘটে নি— এ কথা সত্য হলেও চাঁদ একটি শীতল প্রস্তরখণ্ড— এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ সূর্যালোকের কারণে যেমন পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ওঠানামা করে, তেমনি একই ব্যাপার ঘটে চন্দ্রপৃষ্ঠের বেলাতেও। তবে পৃথিবীপৃষ্ঠের তুলনায় চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার তারতম্যে অনেক বেশি নাটকীয়।
মার্কিন বিজ্ঞান সাময়িকী লাইভ সাইন্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের অধ্যাক জন মনিয়ের বলেন, “চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ওঠানামা করে এবং যে মাত্রায় ওঠানামা করে— তা রীতিমতো চরম। চন্দ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ও শীতলতা— উভয়ই মানুষ কিংবা পৃথিবীর অন্যন্য প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের সহ্যের বাইরে।”
মনিয়ের বলেন, সূর্যালোকের উপস্থিতির সাপেক্ষে চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাইনাস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্লাস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠানামা করে।
অন্যদিকে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সূর্যালোকের সাপেক্ষে এই তাপমাত্রা মাইনাস ৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়া পৃথিবীর আর একটি বড় সুবিধা হলো এর পানি। সূর্যের থেকে দূরত্বের বিবেচনায় সৌরমণ্ডলের এই তৃতীয় গ্রহটির চারভাগের তিন ভাগই পানি। সূর্য থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ তাপ পৃথিবীতে আসে, তার একটি বড় অংশই শুষে নেয় পৃথিবীর বিশালাকৃতির সব সাগর-মহাসাগর। আবার রাতের বেলা সেই তাপের একাংশ বাতাসে মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই তাপের ভারসাম্য রাখে পৃথিবী।
চাঁদের এই সুবিধা নেই। পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহের পৃষ্ঠের পুরোটাই পাথর আর পাথর চূর্ণ হয়ে সৃষ্ট বালি, কোথাও পানি নেই। ফলে তাপ শোষিত হওয়ার উপায়ও নেই।
এছাড়া আরও একটি পার্থক্য রয়েছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ অঞ্চলে দিনের দৈর্ঘ্য থাকে গড়ে ১০ থেকে ১২১ ঘণ্টা, আর চাঁদের এক একটি দিন পৃথিবীর হিসেবে ১৫ দিনের সমান। এ উপগ্রহের রাতের দৈর্ঘ্যও একই।
সূত্র : লাইভ ম্যাগাজিন, জিও নিউজ