রাজসিক প্রত্যাবর্তন যাকে বলে। ভারতের প্রথম চার ম্যাচে জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ কিংবা হার্দিক পান্ডিয়ার ভিড়ে মাঠেই নামা হয়নি মোহাম্মদ শামির। ধর্মশালায় হার্দিকের ইনজুরির সুবাদে একাদশে সুযোগ পেলেন। আর তাতেই করেছেন বাজিমাত।
গতকাল (রোববার) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন শামি। বিশ্বকাপে যা তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ উইকেটের ফিগার। এই ম্যাচেই কিংবদন্তি অনিল কুম্বলেকে টপকে বিশ্বকাপে ভারতের ইতিহাসের ৩য় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন। দলের দারুণ জয়ের দিনে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও।
বিশ্বকাপের আগে শামি যে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন, সেটা বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তার পারফরম্যান্স দেখে। মোহালিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট দখল করেন তিনি। তবে কম্বিনেশনের স্বার্থেই বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে ভারতের প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি তার। টিম ম্যানেজমেন্ট শামিকে বসিয়ে রেখে মাঠে নামায় শার্দুলকে।
ভালো খেলেও কম্বিনেশনের স্বার্থে বাদ পড়তে হলে যে কোনো ক্রিকেটারের নাখোশ হওয়া স্বাভাবিক। তবে মোহাম্মদ শামি যেন অন্য ধাতুতে গড়া। তার দাবি, দল যখন ভালো খেলে, রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সতীর্থদের জন্য গলা ফাটাতে বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে না।
ড্যারিল মিচেলের অনবদ্য সেঞ্চুরির সুবাদে নিউজিল্যান্ড যখন বড় স্কোরের পথে যাচ্ছিল তখনই শামি মিডল ও লোয়ার অর্ডারে ধস নামিয়ে কিউইদের ২৭৩ রানে অলআউটে বাধ্য করেন। মিচেল শেষ পর্যন্ত ১৩০ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন। জবাবে ভারত বিরাট কোহলির ৯৫ রানে ভর করে পাঁচ ম্যাচে শতভাগ জয় নিশ্চিত করে টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে।
ম্যাচশেষে শামি জানান, আগের ম্যাচগুলোতে তার কখনোই মনে হয়নি তিনি দলের বাইরে আছেন, ‘না খেলাটা সবসময়ই কঠিন। কিন্তু ওই সময় দল যদি পারফর্ম করে, ছেলেরা যদি ছন্দে থাকে, তখন বাইরে থেকে নিজেকে আর দোষী মনে হয় না। কারণ আমিও তখন দলের একটি অংশ হয়েই ছিলাম, বিশ্বকাপে আমিও ছিলাম। আমি মনে করি প্রত্যেকেরই অন্যের সাফল্য উপভোগ করা উচিৎ।’
২০১০ সালে অভিষেক হওয়ার পর ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৯৫ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন শামি। গত এক দশকে ভারতের সাফল্যে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সম্প্রতি সাদা বলের ফরম্যাটে ফাস্ট বোলিং বিভাগে তিনি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। পেস অলরাউন্ডার শার্দুল ঠাকুরকেই আগের তিন জয়ের ম্যাচে জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
কিন্তু ডাগআউটে ৩৩ বছর বয়সী শামি নিজের অনুপ্রেরণা ঠিকই খুঁজে নিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি সবসময়ই প্রতিটি ম্যাচ উপভোগের চেষ্টা করি, সেটা দলের বাইরে থেকে হলেও। কারণ ভারতে সবচেয়ে বড় খেলার নাম ক্রিকেট। আর সেই দলের একটি অংশ আমি। মূল দলে থাকাটা জরুরি নয়। দলে ১৫ জন খেলোয়াড় থাকে, সবাইতো আর প্রতিদিন খেলতে পারবে না। চারজনকে বাইরে থাকতেই হবে। সে কারনে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখা উচিৎ।’
বিএসডি / এলএম