চিকিৎসক সাবিরা রহমান হত্যার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, সাবিরার কোনো স্বজনই মামলার বাদী হতে রাজি হচ্ছেন না। স্বজনেরা নানা কারণ দেখাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, সাবিরার স্বামী শামসুদ্দীন আজাদকে মামলার বাদী হতে বলা হয়েছিল। ডায়াবেটিসসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভোগার কারণ দেখিয়ে তিনি মামলার বাদী হবেন না।
অন্যদিকে সাবিরার এক মামাকে বাদী হতে বলা হলেও ঢাকার বাইরে বসবাস এবং সেখানে ব্যবসা থাকার কারণ দেখিয়ে তিনিও মামলার বাদী হতে রাজি হননি বলে জানান সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, সাবিরার একমাত্র ছেলে তাজোয়ার এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁকেও মামলার বাদী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সাবিরার মা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, ছেলেটি কিছুদিনের মধ্যেই পড়াশোনার জন্য কানাডায় চলে যাবে। তাই তাঁকেও বাদী করা যাবে না।
পুলিশ বলছে, এর বাইরে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো স্বজন বাদী হতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত কেউ যদি বাদী না হন, সেক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর থানার একজন উপপরিদর্শক পদমর্যাদার সদস্য মামলার বাদী হবেন।
এদিকে চিকিৎসক সাবিরা রহমান হত্যার ঘটনায় গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবনের দারোয়ান, সাবিরার ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকা এক তরুণী, তাঁর এক বন্ধু এবং বাসার গৃহকর্মীকে নিয়ে গেছে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আশপাশের আরও ছয় থেকে সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কলাবাগান থানা–পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্ত করছে।
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার কলাবাগানের বাসা থেকে চিকিৎসক সাবিরা রহমানের (৪৭) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর দেহে ধারালো অস্ত্রের চারটি আঘাত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পিঠের দিকে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।
কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের একটি ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের আগুন নেভানোর পর ওই চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে সনোলজি কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
লাশটি উদ্ধারের পর কলাবাগান থানা-পুলিশ ছাড়াও র্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।
পরে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাবিরা রহমানের গলার বাঁ পাশে ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের চারটি আঘাত পাওয়া গেছে। মধ্যরাতের কোনো একটা সময় তাঁকে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তাঁর কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে তাঁর শরীরের পিঠের দিকে পুড়ে যায়। কে বা কারা, কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে; সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।