প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীন সরকারের উপহার হিসেবে আসা সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আগামী ২৫ মে থেকে প্রয়োগ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মেডিকেল শিক্ষার্থী, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে যারা পড়াশোনা করছেন তারাই এই টিকা পাবেন বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার (২২ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চীনের টিকা প্রয়োগ শুরু করবো ২৫ মে থেকে। এই টিকা আমরা দিচ্ছি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের। ইতোমধ্যেই আমাদের চিকিৎসক নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে শিক্ষার্থীরা।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘গত এক বছর ধরে মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস পরীক্ষা হচ্ছে না। জুনিয়র চিকিৎসকরা যে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতো, কোথাও সেরকম আর নেই, প্রায় অধিকাংশ হাসপাতালই খালি। এখন যদি চিকিৎসক পেতে হয়, তাহলে আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নিতে হবে। আর পরীক্ষা নিতে গেলে আগে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে। তাই এই টিকা আমরা সাধারণ জনগণকে দিতে পারছি না।’
‘এই টিকা দেওয়া হলে পরবর্তীতে ফাইজারের টিকা গণ রেজিষ্ট্রেশন অনুযায়ী দেওয়া হবে’, যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘যেসব মেডিকেল কলেজগুলোতে টিকা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে এসব টিকা পৌঁছে যাবে। বাইরের টিকা কেন্দ্রগুলোতে এই টিকা যাবে না।’
এর আগে ১২ মে চীন থেকে করোনাভাইরাসের ৫ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে দেশে ফিরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০জে পরিবহন বিমান। ওইদিন ভোর ৫টা ৩১ মিনিটে বিমান বাহিনীর (এস-৩এজিএফ) ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ফ্লাইটটি অবতরণের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে টিকাগুলো হস্তান্তর করেন বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস।
বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সিনোফার্মার ৫ লাখ ডোজ টিকাসহ এডি সিরিঞ্জও রয়েছে। বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে টিকা আনার এই কার্যক্রমকে ‘গুডউইল মিশন’ নাম দেওয়া হয়।
মেডিকেল শিক্ষার্থীরা পাবে সিনোফার্মের টিকা
সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা বিভিন্ন মেডিকেল, নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গত বুধবার নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, যারা মেডিকেল শিক্ষার্থী, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে পড়াশোনা করছেন তাদের এই তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রোগীদের সেবাকাজে অংশগ্রহণ করছেন তাদের এই টিকা পাবেন।
এই টিকা দিয়ে কতদিন টিকাদান কার্যক্রম চালানো যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকার এই সংখ্যাটি কিন্তু অনেক বেশি নয়। তাদের আমরা একই দিনে দেব না, ভাগে ভাগে দেব। তাহলে কিন্তু আমরা তিন-চার দিন অনেক বেশি সময় ধরেই কার্যক্রম চালাতে পারব।
গত ২৯ এপ্রিল চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি এই করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এ টিকা ব্যবহারের সবুজ সংকেত দিয়েছে।