নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের নাজিরপুরে অসহায় এক ব্যক্তির ছাগল চুরি করে ভূরিভোজ করলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আ. লায়েক ফরাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আর ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ঘটনাটি নিয়ে গত ৩ দিন ধরে নাজিরপুরসহ জেলাব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠছে।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী লায়েক ফরাজী উপজেলা সদরের আওয়ামী লীগ অফিস সংলগ্ন একটি ছোট চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি আর্থিক সংকটে কয়েকটি ছাগল পালন করছেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে ভুক্তভোগীর একটি ছাগল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে ওই ছাগলের চামড়া স্থানীয় ঋষি (চামড়া ক্রেতা) বিশ্বনাথের কাছ থেকে গত সোমবার দুপুরে উদ্ধার করা হয়।
চামড়া ক্রেতা জানান, ওই চামড়াটি হাসপাতালের সুইপার বাশার শেখ তাকে দিয়েছেন।
বাশার শেখ জানান, চামড়াটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ভূরিভোজের জন্য জবাই দেওয়া ছাগলের। স্যারেরা ছাগলটি শুক্রবার রাতে খেয়েছেন। আমি এ বিষয়ে অভিযুক্ত হলে সব তথ্য ফাঁস করে দেব। ওই ছাগলটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরেই রান্না হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালে রান্নার কাজে থাকা খাদিজা বেগম। আর ওই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিস কক্ষেই ওই ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় বলে জানান অংশগ্রহণকারী।
ওই ভূরিভোজে অংশ নেওয়া নিজেদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক এ তথ্য স্বীকার করে জানান, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. ফজলে বারীর দাওয়াতে সেখানে গিয়েছেন। সেখানে খাওয়া মাংসের ছাগল চুরি করা বা ক্রয় করা তা তাদের জানা নেই।
সেখানে ভোজে অংশ নেওয়া এক নারী চিকিৎসক জানান, ওই রাতে স্যার ফোন দিয়ে আমাকে সেখানে নিয়েছেন।
ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রত্যক্ষদর্শী মো. সজল হোসেন হাওলাদার জানান, শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে আমি আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসব উপলক্ষে হাসপাতালের দোতলায় কেবিনের পাশের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলাম। এ সময় ওই হাসপাতালের ঝাড়ুদার মো. আবুল বাশারসহ ৩ জন একটি খাসি ছাগল আটকে দোতলায় নিয়ে হাসপাতালের কেবিনের একটি টয়লেটে রাখে ও জবাই দেয়। আমি তাদের নিষেধ করলেও তারা একটি বঁটি দিয়ে তা জবাই করে বাজারের শপিং ব্যাগে নিয়ে যায়।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. আব্দুল লায়েক ফরাজীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। তিনি তা উপজেলা চেয়ারম্যানকেও দিয়েছেন।
নাজিরপুর থানার ওসি মো. আশ্রাফুজ্জামান জানান, ছাগল চুরির একটি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে শুনেছি। আমি থানায় ছিলাম না তাই ওই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলে বারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি সোমবার আমার শ্বশুরের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসছি। এখন ব্যস্ত আছি, বাসায় ফিরে আপনাকে ফোন দেব।
স্থানীয়রা জানান, গত ৬ মাসে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০টি খাসি ছাগল চুরি হয়ে গেছে।