মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্বরন: জনগণের কল্যাণে যে, রাজনীতির সূচনা,সেই রাজনীতির সু-ফল আমরা কি পাবনা? এমন প্রশ্ন হয়তো দেশের সিংহভাগ জনগণের মনেই ঘোরপাক দিচ্ছে। কেনো দিচ্ছে? কী কারণে দিচ্ছে? এটা হয়তো আপনার আমার অজানা থাকার কথা নয়! বিশ্বে বিংশশতাব্দির পরেও রাজনীতির মায়া-জালে প্রতারিত জনগণ। যে জনগণের দ্বারা রাজনীতির ক্ষমতায়ন। আর এটা সারা বিশ্বে হয়তো নতুন কিছু নয়,কারণ কৃষি জমি ও কলকারখানায় র্নিভরশীল দেশগুলোর বাস্তবতা অনুবাদন করলে দেখা যায় যে,একজন কৃষক যখন কঠোর পরিশ্রম করে ধান,গম, সবজিইত্যাদি উৎপাদন করে এবং তার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বাধ্য হয়েই তার ফসলী জমির উপর দাড়িঁয়ে বিষপানের মাধ্যমে আত্মহত্যা করে। একজন শ্রমিক তার কর্মরত কারখানায় শতভাগ উৎপাদন করার পরেও বেতন-ভাতা না পেয়ে অভাবেরতারণায় জরজীর্ণ সংসারের দ্বায়বার নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতে হয়। এরচেয়ে বাস্তবতা আর কী হতে পারে? ব্যাক্তি জীবনে চলার পথে অনেক চ্যালেঞ্জ ই হয়তো আসবে,অনেক কঠিন মূহূর্তই হয়তো আসবে,তার কোনোটাতে মানুষ হয়তো হেরে যেতেই পারে। কিন্তু জনগণ কেন সেখানে থেমে থাকবে? জনগণ হয়তো নতুন উদ্যেম নিয়ে, সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে জীবনের নতুন চ্যালেঞ্জে,কারণ যেখানে রাষ্ট্রনীতির দুর্নীতিতে,নেতার লোলপিত দৃষ্টিপাতে, জনগণের বিপন্ন সংসার, সেখানে ন্যায্য দাবি আদায় জনগণের মৌলিক অধিকার।
রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি অথবা রাজগতি হলো দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থ ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কিত কর্মকান্ডের সমষ্টি। উদাহরণস্বরুপ সম্পদের বন্টন হল এমন একটি কর্মকান্ড। রাজনীতি নিয়ে একাডেমিক অধ্যয়নকে রাজনীতিবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। এটি আপোষের ও অহিংস রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে ইতিবাচক অর্থে, অথবা সরকার বিষয়ক বিজ্ঞান বা কলা হিসেবে বিশদভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু পাশাপাশি এটি প্রায়শই একটি নেতিবাচক অর্থও বহন করে। উদাহরণস্বরুপ উচ্ছেদবাদী উইনডেল ফিলিপস ঘোষণা দেন“আমরা রাজনৈতিক চাল চালি না,দাসপ্রথার বিরোধিতা নিয়ে হাসি তামাশা করা আমাদের স্বভাবে নেই”রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পরিসরে মৌলিকভাবে এ বিষয় নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা রয়েছে,যেমন এটি কিভাবে ব্যবহার করা উচিৎ, বিস্তৃতভাবে নাকি
সীমিতভাবে, রাজকীয়ভাবে নাকি সাধারণভাবে, এবং কোনটি এক্ষেত্রে অবশ্যম্ভবীঃ সংঘাত নাকি সমবায়? রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়,যার মধ্যে আছে কারও নিজস্ব রাজনৈতিক অভিমত মানুষের মাঝে প্রচার করা। অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময়,আইন প্রনয়ণ, এবং বলপ্রয়োগের চর্চা করা। যারমধ্যে আছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা লড়াই। সামাজিক বিভিন্ন স্তরে বিস্তৃত পরিসরে রাজনীতি চর্চা করা হয়। ঐতিহ্যবাহী সমাজব্যবস্থা সমূহের গোত্র ও গোষ্টী থেকে শুরু করে আধুনিক স্থানীয় সরকার,ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত। আধুনিক জাতি রাষ্ট্রগুলোতে মানুষ প্রায়ই নিজস্ব মতবাদ তুলে ধরতে রাজনৈতিক দল গঠন করে। কোন দলের সদস্যগণ প্রায়শই বিভিন্ন বিষয়ে সহাবস্থানের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করে এবং আইনের একই পরিবর্তন ও একই নেতার প্রতি সমর্থনে সহমত হয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন হলো সাধারণত বিভিন্ন দলের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো কোন কাঠামো যা কোন সমাজের মধ্যকার গ্রহনযোগ্য রাজনৈতিক পদ্ধতি সমূহকে সংজ্ঞায়িত করে।
রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় প্রাথমিক প্রাচীন যুগে। যেখানে প্লেটোর রিপাবলিক,এরিস্টটলের রাজনীতি,চাণক্যর অর্থশাস্ত্র ও চাণক্য নীতি(খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী),এবং কনফুসিয়াসের লেখার ন্যায় দিগন্ত উম্মোচনকারী কাজগুলো পাওয়া যায়। আর আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির জন্মের ইতিহাস,বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা,আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত। ১৯৭১ এ অস্থায়ী সরকার গঠন এবং অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সরকারের প্রধান ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে এখানে জনগণের সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচিত হন। এবং কার্যনির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়ন করা হয় জাতীয় সংসদে। বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়। এখন এতে ১৭ টি সংশোধনী যোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসন এবং সেনা প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছে।
আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতির লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং জনকল্যাণ। সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রাজনীতিতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। তারা সকল রুপ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বেশ হতাশ। অনেকেই আমাকে বিভিন্ন সময় বলে থাকেন, যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা খুবই হতাশ,কারণ তারা রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত, এ ব্যাপারটাকে আসলে এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি আমি-তারা হতাশ বলেই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত,আবার উল্টোভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ায় রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত বলেই তারা হতাশ। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের রাজনীতির লক্ষ্য যদি হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও জনকল্যাণ, তাহলে জনগণ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কেনো? ভোট কেন্দ্রে জনগণের অপস্থিতি সীমিত আকারে কেনো? জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটে চলেছে ও বৃদ্ধি পাচ্ছে কেনো? তাহলে কি ধরে নিবো, “জনগণের জীবন ধারায়,রাজনীতি এখন পথহারা”? বিশ্বে ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ ক্ষমতার মূল উৎস। রাজনৈতিক বাস্তববাদ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সর্ম্পক তত্ত্বসমূহের মধ্যে একটি চিন্তাধারা,যা প্রারম্ভিক আধুনিক ইউরোপের বাস্তব-রাজনৈতিক ধারণার মধ্য দিয়ে উদ্ভুত হয়েছিল।
সারা বিশ্বের জনগণের জীবন ধারায়, জীবন কারো কাছে ছোট,কারো কাছে বড়, আবার কারো কাছে আনন্দের অথবা কারো কাছে বেদনার। একজন ধনী সুখী মানুষকে প্রশ্ন করলে হয়তো বলবে,সুখ অনুভব করার সময় কই?বাঁচবোই বা কতদিন? একজন অভাবী অসুখী মানুষকে প্রশ্ন করলে বলবে,আর বাঁচতে চাইনা। দিন আর শেষ হয় না। মরতে পারলেই এখন বাঁচি। জীবনের প্রতি কখনো মায়া হয়, আবার কখনো ঘৃণা হয়। তবে কথা গুলো সমাজের সকল স্তরের মানুষের কথা নয়। এই কথা গুলো কোনো একটি শ্রেণীর মানুষের। অতি মাত্রায় যারা সুখ উপভোগ করেও আরও না পাবার কষ্টে ভোগে। ধনী-গরীব,শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই যেন জীবনের এই বৃত্তের কাছে এসে নিজেকে নিরুপায় মনে করে। সময় বদলেছে,সমাজ বদলেছে, বদলেছে আমাদের জীবনধারা। কিন্তু বদলায়নি জীবনের ধ্রুব বাস্তবতা। একটু ভেবে দেখুন,আমাদের বাংলাদেশের গরীব মানুষের পেটের তিনবেলার আহার চলে যাচ্ছে অসৎ পয়সাওয়ালাদের পেটে। সকাল থেকে সন্ধ্যায় সূর্য অস্তের পর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করার শেষে কেবল দু’মুঠো ডাল-ভাতের স্বাদ নিতে চায় সাধারণ জনগণ। কিন্তু রাজনীতির চত্রছাঁয়ায় নেতার মুখোশে জনগণের সাথে সর্বথই চলছে হায়েনার আচঁরণ। এ জাতিয় আচাঁরণ বলে দেয় রাজনীতি জনগণের জীবনধারায় ব্যর্থ,কারণ রাজনৈতিক যে প্রেরণা জনগণের অন্তর থেকে আসে তা ব্যক্তির স্বার্থে উধাও।
বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের অপস্তিতি প্রতীয়মান দৃষ্টিগোচর করলে মনে হয় ভোটাররা রাজনীতির প্রতি ক্ষোভ-ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আসল কথা হলো মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে কাজ করে,আপনার প্রয়োজনে নয়। র্যাফল ওয়ালডো এমার্সনের সম্পর্কে একটি গল্প এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক। র্যাফল ওয়ালডো ও তার ছেলে একদিন একটি বাছুরকে গোয়ালে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। বাবা ও ছেলে মিলে অনেক টানাটানি ধাক্কাধাক্কি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন,বাছুর অনড়। তখনি একটি ছোট্র মেয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। সে এসে তার ছোট্র আঙ্গুলগুলি ধীরে ধীরে বাছুরটির মুখে বুলিয়ে দিল এবং বাছুরটিও স্নেহপ্লুত হয়ে মেয়েটিকে অনুসরণ করে গোয়ালে গিয়ে ঢুকলো। এতে বুঝা যায় জনগণ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি বরং জনগণের জীবনধারায় রাজনীতি এখন পথহারা। দেশ ও জাতিকে কে রক্ষা করতে জনগণের জীবন ধারার রাজনীতি অবাশ্যক। বেপরোয়া রাজনীতির গতিপথ বন্ধ করে,জনগণের কল্যাণের রাজনীতির বড়ই প্রয়োজন।
লেখক ও কলামিষ্ট, অনলাইন নিউজ র্পোটাল, আমাদের সমাজ।