জেলা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সিলেটে প্রতি বছরই বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। মূলত সিলেটের শেষ প্রান্তে পাহাড়ের কারণেই বৃষ্টিপাত বেশি হয়। তবে চলতি বছরে সিলেট বিভাগে প্রায় ৬৮ শতাংশ বৃষ্টিপাত কমে গেছে।
এতে করে তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পানির পরিমাণও কমে আসার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এমনকি সেচের জন্য পানিবন্দি রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই সিলেট বিভাগে গড়ে ৪ হাজার ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তবে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৩ হাজার মিলিমিটারের নিচে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সিলেটে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে এ বছর সিলেটে সেই অনুপাতে বৃষ্টিপাত হয়নি। এমনকি সেপ্টেম্বর মাসে যেখানে ৫৩৫ থেকে ৫৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০০ মিলিমিটার এর নিচে।
এদিকে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, নগরায়ণের ফলে গত দুই দশকে সিলেটসহ বড় পাঁচটি শহরে তাপমাত্রা বেড়েছে। সিলেটে ১ দশমিক ১০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘সারফেস আরবান হিট আইল্যান্ড ইনটেনসিটি ইন ফাইভ মেজর সিটিজ অব বাংলাদেশ: প্যাটার্নস, ড্রাইভার অ্যান্ড ট্রেন্ডস’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের বড় শহরগুলোতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার এমন তথ্য উঠে আসে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার ছয়জন গবেষক।
সিলেট বিভাগে গত তিন দিন ধরে তীব্র গরমে ভোগান্তিতে রয়েছেন মানুষ। সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ এই সময়ে সিলেটে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, মূলত সমুদ্রের দিকে জলীয়বাষ্প গিয়ে সিলেটের শেষ প্রান্তের পাহাড়ে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টিপাত হয়। আর এর কারণেই সিলেটে অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে বর্তমানে সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ৬৮ শতাংশ কমে গেছে।
এই আবহাওয়াবিদ জানান, মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। তবে সেই বৃষ্টিপাত হলেও পরিমাণ খুব বেশি হবে না। বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় কৃষিকাজে সেচের পানির অভাব হতে পারে। এই কারণে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের একটি সভায় সেচের জন্য পানিবন্দির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টিপাত কমতে সাইক্লোনের প্রভাবের বিষয় উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, এই বছরে প্রতি মাসেই সাইক্লোনের একটি প্রভাব ছিল। সাইক্লোনের প্রভাবে আবহাওয়াকে শুষ্ক করে সমুদ্রের দিকে টেনে নিয়ে যায়। যার কারণে বৃষ্টিপাত কমে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের অংশ হিসেবেই ধরা যায় এই বৃষ্টিপাত কমের কারণ।