নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ১ হাজার ৫৯৯টি ইভিএমের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টি মেশিনের মধ্যে দৈব চয়নের ভিত্তিতে কয়েকটির ‘অপারেশনাল ক্যাপাসিটি’ যাচাই করা হয়। এতে মেশিনগুলোতে ত্রুটি দেখা যায়, যা নিম্নমানের মেশিন কেনার ইঙ্গিত দেয়।
অথচ বিশেষজ্ঞরাও মেশিনগুলো ‘মানসম্মত নয়’ বলে মতামত দিয়েছিল। তবে মুহাম্মদ জাফর ইকবালসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা কেন আগে ইভিএমকে ভোটের জন্য যথাযথ মনে করেছিলেন। এসব বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো ব্যক্তিগণ কোন ভিত্তিতে মেশিনগুলোকে যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিও কমিশনের দৃষ্টিগোচরে আনা আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
গতকালের অভিযানে সংগৃহীত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার পর ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটগ্রহণে এক যুগ আগে ইভিএম ব্যবহারের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। আওয়ামী লীগ সরকার ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও তার ঘোরবিরোধী ছিল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য ছিল, যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির সুযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই বছরের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদসহ একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নেয় ইসি।
ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম দেখে ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫ মে মতবিনিময়ের পর ভোটে মেশিনগুলো ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জাফর ইকবাল ও কায়কোবাদ।
সেদিন জাফর ইকবাল বলেছিলেন, ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন পুরোটাই দেখেছি। তার ভেতরের খুঁটিনাটি, টেকনিক্যাল বিষয় যা আছে, তাও জেনে নিয়েছি। সবশেষ আমাদের জন্য রাখা মেশিনটি খুলে দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কনভিন্সড হয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার মেশিন।
ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলকেও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আট মাসের মাথায় গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। একইভাবে ‘নিম্নমানের ইভিএম মেশিন কিনে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ’ জমা পড়েছে সংস্থাটিতে। সেটিই এখন খতিয়ে দেখছে দুদক।
উল্লেখ্য, ‘নিম্নমানের ইভিএম’ কিনে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়ের অভিযোগে গতকাল রোববার অভিযান চালায় দুদক। সেসময় সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেশিনগুলো নির্বাচন কমিশন প্রধান কার্যালয়, ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও বিএমটিএফে সংরক্ষিত আছে।