দ্বিতীয় দফায় শুরু হয়েছে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠক। প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা ও ফরিদপুরের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটির হাইকমান্ড। আর এ বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিয়ে এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে বিএনপির কী লাভ হয়েছে-এমন প্রশ্ন রেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির নেতারা। একইসঙ্গে আগামী দিনে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দলের শীর্ষ নেতাদের।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা চলে বৈঠক। এতে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, নির্বাহী কমিটির প্রত্যেক সদস্যের বক্তব্যে তিনটি বিষয় উঠে আসে। প্রথমত, দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করতে হলে বিএনপির আন্দোলনে যেতে হবে। এক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ত আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে।
তারা বলেন, আন্দোলনে অন্য দলগুলো অংশ নিতে চাইলে সেগুলোকে স্বাগত জানাবে বিএনপি। তবে সেসব দলকে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে আসতে হবে। কোনোভাবেই আন্দোলনের নেতৃত্ব অন্যদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া, দলের অনেকে এখনো কোন স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন, তা নিয়ে বৈঠকে নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, বৈঠকে একাধিক সদস্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনেকে সদস্যের প্রশ্ন ছিল, গত সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপির কী লাভ হয়েছে, যে জোটের নেতৃত্ব ছিল অন্যদের হাতে। এতে বিএনপির রাজনীতি ও নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম বলেন, বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ আছে। তবে, এটাই বলতে পারি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, অনেকে আকার-ইঙ্গিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তার কবর নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিতর্কিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করে জামায়াতের বিবৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, যাদের মুখে দলের মহান নেতা (জিয়াউর রহমান) নাম আনতে কষ্ট হয়, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখার বিষয়টি আরেকবার ভাবতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, বৈঠকে সবাই সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলন করার পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবার মতামত ছিল, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিএনপি আন্দোলন করেছে, কিন্তু ঢাকায় আন্দোলন করতে না পারার কারণে তা সফল হয়নি। তাই এবার জনসম্পৃক্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আগে ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তা জেলায়-জেলায় ছড়িয়ে পড়বে। কেউ-কেউ নারীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এছাড়া ছাত্রদল, কৃষকদল ও শ্রমিকদলকে নিজ নিজ পেশার মানুষের ‘জনসম্পৃক্ত’ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ এসেছে বৈঠকে।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত দখলদার সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, এ বিষয়ে নেতারা আলোচনা করেছেন। গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। সামনে আরও সভা রয়েছে। সব সভা শেষে বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, মঙ্গলবারের বৈঠকে ঢাকা ও ফরিদপুর বিএনপির নির্বাহী কমিটির আট সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের সঞ্চালনায় বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শাহ আবু জাফর, বাবুল আহমেদ, হাবিবুর রশিদ হাবিব, মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ওবায়দুল হক নাসির, শেখ রবিউল, আব্দুল মতিন, পেয়ারা মোস্তাফা, ফেরদৌস আহমদ খোকন, কাজী মনির, আকরাম হোসেন, রফিকুল ইসলাম রাসেল, ইয়াসমিন আরা হক, গিয়াসউদ্দিন আহমদে, মোদাসের আলী ইসহাক, মজিবুর রহমান, সাঈদ সোহরাব, তমিজ উদ্দীন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, দিপু ভূইয়া, অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান সুরুজ, রোকসানা খানম মিতু প্রমুখ।