আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জার্মানিতে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বিএএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৩৩৬ জন আশ্রয়প্রার্থী প্রথমবারের মতো জার্মানিতে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলেছে, ‘‘এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৭২ হাজার ৮১৮টি আনুষ্ঠানিক আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৬১ হাজার ৩৩৬টি প্রাথমিক আবেদন এবং ১১ হাজার ৪৮২টি দ্বিতীয় পর্যায়ের বা আপিল আবেদন ছিল।’’
ওই মুখপাত্র বলেন, ‘‘এবার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আবেদন ৪৪ দশমিক ৯ ভাগ কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এক লাখ ৩২ হাজার ২০১টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছিল।’’
জার্মান স্থলপথে সীমান্ত তল্লাশির পাশাপাশি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বলকান রাজ্যগুলোর নেওয়া পদক্ষেপের কারণে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনও আশ্রয় আবেদন কম হওয়ার একটি কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে, জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সিরিয়ার নাগরিকরাই এগিয়ে ছিলেন।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে প্রথমবারের মতো আশ্রয় আবেদন করা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সিরীয়দের টপকে এক নম্বরে উঠে এসেছেন আফগানরা। ১৫ হাজার ১৮১ জন আফগান আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। আর সিরীয়দের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ১২৭ জন।
তুরস্ক সরকার বলেছে, ৯ ডিসেম্বর থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দুই লাখ ৭৩ হাজারেরও বেশি সিরীয় স্বেচ্ছায় তুরস্ক থেকে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই এমন অভিবাসীদের ঠেকাতে ২০২৩ সাল থেকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানি। গত মে মাস থেকে সেই তল্লাশি আরও জোরাল হয়েছে। এসপিডির সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসা সিডিইউ-সিএসইউ সরকার সীমান্তে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
• সীমান্ত থেকে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে মামলা
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দিতে বর্তমান সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছে। রোববার জার্মান ম্যাগাজিন স্টেয়ার্ন এই তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে, বার্লিনের একটি প্রশাসনিক আদালত সরকারের এই নীতিকে ‘বেআইনি’ বলে রায় দিয়েছেন।
• আদালতের রায়ে যা বলা হয়েছে
গত ৯ মে পোল্যান্ড হয়ে জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় একটি রেলস্টেশনে আসেন সোমালিয়ার তিন নাগরিক। সেখান থেকেই তাদের পোল্যান্ডে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের প্রশাসনিক আদালত বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের এভাবে ফিরিয়ে দেওয়া আইন বর্হিভূত।
আদালত বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডাবলিন পদ্ধতি অনুসরণ না করে সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো অবৈধ।
‘‘জার্মান ভূখণ্ডের কোনও সীমান্তে আশ্রয় চাওয়া কোনও ব্যক্তিকে’’ ডাবলিন পদ্ধতি অনুযায়ী তার আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব কোন দেশের তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ‘‘ফেরত পাঠানোর নিয়ম নেই’’ বলে জানিয়েছেন জার্মান আদালত।
আদালতের এমন রায়ের পরও সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নীতি অব্যাহত রেখেছে রক্ষণশীলদের নেতৃত্বাধীন জার্মান সরকার। এর মাঝেই দেশটির সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের জন্য এটাকে একটা বড় ধাক্কা হিসাবে দেখা হচ্ছে। কারণ, অভিবাসনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি ও তার দল। মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ এবং সীমান্তে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সেখান থেকেই ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
• অনড় জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডোব্রিন্ট বলেন, ৭২ ধারা প্রয়োগে অর্থাৎ সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে আরও যুক্তি তুলে ধরা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী, এটি এমন একটি ধারা যার অধীনে জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যানের সুযোগ রয়েছে।
ফুংকে মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোব্রিন্ট বলেন, ‘‘আমরা পর্যাপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করব। তবে এ বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় বিচার আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, আমাদের পদক্ষেপগুলো ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’’
ইউরোপীয় অভিবাসন নীতি কঠোর করার ক্ষেত্রে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে চায় জার্মান সরকার। এ জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ট প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। আগামী ১৮ জুলাই জার্মানিতে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইনফোমাইগ্রেন্টস।