চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজে ও কনটেইনারে করে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার হার কমে এসেছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার ঘটনা জানাজানির পর বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। বন্দরের আন্তর্জাতিকমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেদ করে কীভাবে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে, তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এসব ঘটনা বন্দরের নিরাপত্তার ঘাটতি সামনে নিয়ে আসছে।
বন্দর ও শিপিং এজেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ‘এমভি হাইয়ান ভিউ’ জাহাজে করে সিঙ্গাপুর থেকে লিটন মোল্যা এক ট্রাকচালককে ফেরত আনা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর লিটন মোল্যা বৈধ পাস নিয়ে বন্দরে ঢুকে এমভি হাইয়ান ভিউ জাহাজের পেছনের রেলিং বেয়ে উঠে যান। এ সময় একটি খালি কনটেইনারে লুকিয়ে থাকেন তিনি। জাহাজটি সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে পিপাসায় কাতর লিটন কনটেইনার থেকে বেরিয়ে এলে ধরা পড়েন।
এ ঘটনাসহ গত এক বছরে জাহাজে ও কনটেইনারে করে বিদেশে যাওয়ার তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুজনকে জীবিত ফেরত আনা হলেও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া একটি কনটেইনারে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ বছরের ১৭ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একটি জাহাজের খালি কনটেইনার থেকে রাতুল ইসলাম নামের এক কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
মামলার পর তদন্ত কমিটি
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিদর্শক নাছির উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে বন্দর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিচালক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সৈয়দ সাজ্জাদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকচালক বৈধভাবে বন্দরে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর কীভাবে জাহাজে ওঠে লুকিয়ে ছিলেন, সে ঘটনার দায়দায়িত্ব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না হয়, সে জন্য সুপারিশ করতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৪ বছরে ১০ ঘটনা
গণমাধ্যম, বন্দর ও শিপিং এজেন্টদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত জাহাজে ও কনটেইনারে লুকিয়ে বিদেশ যাওয়ার অন্তত ১০টি ঘটনার কথা জানা গেছে। এভাবে লুকিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় এ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নয়জন জীবিত ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। এই নয়জনের মধ্যে দুজনকে চট্টগ্রাম বন্দর ফটক ও জাহাজ থেকেই আটক করে নামিয়ে আনা হয়। বাকি সাতজনকে সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া ও ফ্রান্সশাসিত আফ্রিকার দেশ রি-ইউনিয়ন থেকে ফেরত আনা হয়।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ গতকাল শনিবার বলেন, বন্দরে এখন আন্তর্জাতিকমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এরপরও এ ধরনের ঘটনা বন্দরের নিরাপত্তার ঘাটতি সামনে নিয়ে আসছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য বন্দরে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা উচিত। তদারকিও বাড়ানো উচিত।
BSD/FA