মুহাম্মদ সম্রাট
বাবা শব্দটি কারও কাছে বটবৃক্ষ। কারও কাছে মাথার ওপর বিশাল একটা ছাদের ন্যায় কিংবা তপ্ত রোদে এক টুকরো মেঘ। এ এক সংজ্ঞাহীন শব্দ।
বাবাই আমাদের প্রথম সুপারহিরো।প্রতিটা সন্তানই তার পিতার কাছে একেকটা হীরের টুকরো। তবুও সব বাবারা তাদের সন্তানদের প্রতি যে দায়িত্ব তা ঠিকমতো পালন করে না। অনেকেই অনেক কারণেই করতে পারে না। আবার কত বাবা সারাজীবন সন্তানের পিছু ছুঁটতে ছুঁটতে নিজের জীবন শেষ করে দেয়, কিন্তু বৃদ্ধকালে সন্তানের কাছে মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও হয় না।
আবার অনেক সন্তান তো জন্মের পর থেকে বাবাকেই দেখেনি। যার মাধ্যমে তার জন্ম অথচ সে নিজেই জানে না তার পিতা কে, সে নিজেই দেখেনি তার প্রতিচ্ছায়ার মানুষটিকে, সবই বিধাতার ইচ্ছা।
এবার আমি আমার বাবার কথা বলি, কী পেয়েছি আমি বাবার কাছে? কী দিয়েছে বাবা আমাকে? আমি কখনোই আমার বাবার আদর স্নেহ পাইনি। আমি কখনোই আমার বাবার শাসন পাইনি। আমি কখনোই আমার বাবার স্পর্শ পাইনি। বাবা সবসময় আমার কাছ থেকে দূরে থেকেছে। আমি ছোটবেলা থেকে ভালোমন্দ যাই করেছি কখনোই আমার বাবা আমাকে ডাক দেয়নি। আমার কোনো অর্জনে বাবার কোনো উৎসাহ পাইনি। আমার কোনো আপদে বিপদেও আমার বাবা আমার কোনো খোঁজখবর রাখেনি।
অনেক সন্তানই সবসময় বাবার ক্ষমতা দেখায়। কোথাও কোনো সমস্যা হলে বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি সেই সুযোগ পাইনি। কারণ আমি জানি আমি ডাকলেও আমার বাবা আসবে না। আমি সারাদিন বাবার ক্ষমতা দেখিয়েও কোনো লাভ নেই।
ছোটবেলা থেকে বাবাকে অনেক ডেকেছিলাম; কিন্তু তিনি আমার ডাকে কোনো কর্ণপাত করেননি। তবে লোকমুখে শুনতাম আমার বাবা সবসময় মানুষের আপদে-বিপদে পাশে থেকেছে। আমার বাবা নিজের জীবনের চাইতেও মানুষের জীবনকে বেশি মূল্যায়ন করতেন। সমস্ত এলাকাজুড়ে একনামে পরিচিত ছিলেন আমার বাবা। এলাকার মানুষ আমার বাবাকে উপাধি দিয়েছিলেন ‘মহৎ এবং উদার’। আমরা যখন কোথাও গিয়ে বলি আমার বাবা অমুক তখন আলাদা একটা মূল্যায়ন পেয়ে থাকি।
মানুষ বলে আমার বাবা সবসময় ভালো কাজ করতেন। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। কখনোই কাউকে ঠকানোর নজির নেই আমার বাবার জীবনে। নিজে ঠকে মানুষকে জিতিয়েছে সারাজীবন। সবার কাছে হয় তো প্রশ্ন জাগতে পারে, এতকিছুর পরও কেন বাবা আমাকে অবহেলা করেছেন?
উত্তর একটাই- তিনি আমাকে কিছুই করার সুযোগ পায়নি। কারণ আমার বয়স দুই বছর থাকা অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তিনি যুগের পর যুগ শুয়ে আছেন অন্ধকার কবরে। যেখানে আমি হাজার বার ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ পাইনি।
যখনই আমি মায়ের কোল ছেড়েছিলাম, হাঁটতে শিখেছিলাম, একটু একটু কথা বলা শুরু করেছিলাম তখনই বাবাহীন জীবন শুরু হয় আমার। তবে আফসোস নেই। কারণ পরপার থেকে তিনি আমাদের জন্য যা দোয়া করেছেন, দুনিয়ায় করে যাওয়া ভালো কাজগুলির বিনিময়ে আজ আমরা কোনকিছুর অভাব নেই। আল্লাহ কখনোই আমাদেরকে নিরাশ করেননি।
জানি না পরপারে কেমন আছে বাবা। আজিমপুর কবরস্থানে শতশত মানুষের কবরের সাথে আমার বাবার কবরটাও। ভালো থেকো বাবা। হয় তো কোনো একদিন পরপারে তোমার সাথে আবার দেখা হবে।
লেখা: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী