নিজস্ব প্রতিনিধি:
কয়েকদিন ধরে দেশে তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। শরতকালেও তীব্র গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস। ঢাকায় বয়ে যাচ্ছে সুদূর সৌদি আরবের জেদ্দার মরুভূমির মতো উত্তাপ। গরমে নাভিশ্বাস দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সমুদ্রে লঘুচাপের কারণে ভূমিতে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়া এবং উত্তর গোলার্ধে গরমের কারণে এই অবস্থা।
গুগলের আবহাওয়া আপডেটে দেখা যায়, রোববার বেলা ১১টার দিকে ঢাকায় বাড্ডা, মগবাজার, মিরপুর, তেজগাঁও, মতিঝিলসহ কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও রিয়েল ফিল (অনুভূত) তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির কাছাকাছি। এসময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৭৪ ভাগ। শরতের এই সময় সাধারণত বাতাসে আর্দ্রতা থাকে ৫০ এর কাছাকাছি।
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় বাণিজ্যিক শহর জেদ্দায় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ছিল শতকরা ২৬ ভাগ।
ঢাকা ও আশাপাশের কিছু এলাকায় বৃষ্টির কারণে শনিবার রাতের তাপমাত্রা একটু কম থাকলেও রোববার সকালে আবার গরম বাড়তে থাকে।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় তেঁতুলিয়ায়, ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, দিনাজপুর ও সৈয়দপুরেও তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এদিন খুলনাতে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গরমের কারণ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, উত্তর গোলার্ধে গরম অবস্থা বিরাজমান। এর প্রভাব বাংলাদেশেও রয়েছে। এ ছাড়া, বঙ্গোপসাগরের আশেপাশে লঘুচাপ থাকলে গরম বাড়ে। এখন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গনাতে একটি লঘুচাপ আছে। এর ফলে বাংলাদেশের আশেপাশে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়েছে। আর এই বৈশিষ্ট্য তাপ ধরে রাখে।
শুধু রাজধানীতে নয়, সারা দেশেই গরম আবহাওয়া রয়েছে বলে জানালেন এই আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, ‘সারা দেশেই গরম রয়েছে। তেতুলিয়াতেও এখন গরম। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে ট্রান্সবাউন্ডারি পলুট্যান্ট রয়েছে। এর কারণে তাপ বাড়ছে।’
চলমান গরম আরও এক থেকে দুই দিন থাকবে বলে জানান আবুল কালাম মল্লিক।
গরমের দাপট থাকলেও আবহাওয়া অধিদপ্তর শোনাল আশার বাণী। গত কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টির আভাস থাকলেও সেটি হয়নি। বলা হয়েছিল, অক্টোবরের এই সময়ে দেশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, ‘বৃষ্টি এলেই গরমটা কমে যাবে। বৃষ্টি আছে সামনে। গতকাল (শনিবার) কিছু বৃষ্টি হয়েছে। আজকে সন্ধ্যাতেও কিছু বৃষ্টি হবে। ১৮ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্তও বৃষ্টি হবে। তবে সারা দেশের সব অঞ্চলে নয়।’
কবে আসবে শীত
শীত কবে আসছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, নভেম্বরের শেষ নাগাদ শীত আসবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীতের আগমন ঘটে। এখন দেশে মৌসুমি বায়ু আছে, তবে খুব দুর্বল। মেটিওরোলজির ভাষায় ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে শীতের দিন গণনা করা হয়ে থাকে, যা ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়।
এখন ভোরে যে সাদা সাদা কুয়াশার মত দেখা যায় সেটি শীতের কুয়াশা নয় বলে জানালেন আবুল কালাম মল্লিক। বলেন, ‘ধুলার সঙ্গে জলীয় বাষ্প মিলে এটি তৈরি হয়। ওটাকে ধোঁয়াশা বলা হয়। এটি কুয়াশা নয়।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পুর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসারে অবস্থানরত লঘুচাপটি উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তারাঞ্চল থেকে সরে গেছে। দেশের অন্যত্রও মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা দুর্বল রয়েছে।
খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়; রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
বিএসডি / আইকে