নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিকেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে সাত জনের ফোর্স। ভোটের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক প্লাটুন বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র্যাবের টিম। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। প্রতি ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
নির্বাচন ভবনে স্থাপিত মনিটরিং সেল থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া আচরণবিধি প্রতিপালন ভোটের এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। আবার সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনায় রয়েছেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরাও।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে। ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
এ অবস্থায় ৫৭টি জেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন, সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮৫ জন ও সংরক্ষিত পদে ৬০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছে ৬০ হাজার ৮৬৬ জন। তারা ৪৬২টি ভোটকেন্দ্রের ৯২৫টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। একটি জেলায় যতগুলো স্থানীয় সরকার রয়েছে, সেগুলোর প্রতিনিধিরাই ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের নির্বাচিত করবেন।
নির্বাচনে ২৬ জন চেয়ারম্যান, ১৮ জন মহিলা সদস্য এবং ৬৫ জন সাধারণ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় হয়েছেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসক ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। আর প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছে অন্যান্য নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠায় তাকে পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দেশে ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। ১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় প্রণীত আইনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল। পরবর্তীতে আইনটি কার্যকারিতা হারায়।
এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ২০০০ সালে নতুন আইন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। সে আইনটি মাঝে ফের অকার্যকর থাকে। পরবর্তীতে নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় নিজ দলের নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ। এদের মেয়াদ শেষ হলে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো সারাদেশে ৬১ জেলায় নির্বাচন দেওয়া হয়। সে সময় ১৯ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয়বারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে অধিকতর আইনি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ অবস্থায় জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী গত ৬ এপ্রিল সংসদে পাস হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ হয় ১৩ এপ্রিল।
আগের আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধীত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (দুই জনের কম নয়)। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নিদির্ষ্ট করে দেওয়া ছিল।
আগে পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছিল আইনে। কিন্তু সংশোধিত আইনে সেটির পরিবর্তে প্রশাসক বসানোর বিধান আনা হয়েছে। সেই ক্ষমতা বলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রশাসক বসানোর আদেশ জারি করে, যার বলেই এখনো প্রশাসক রয়েছে দায়িত্বে।
প্রশাসক বসানোর পরের দিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী গত ১৮ এপ্রিল এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলে। এরপর সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা সাপেক্ষে ভোটের তফসিল দেয় নির্বাচন কমিশন। জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ডেপুটি কমিশনার সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ‘সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা’ এবং তার মনোনীত উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার অথবা এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার সহকারী সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করে থাকেন।
বিএসডি/এফএ