কৃষি ডেস্কঃ
সিলেটের জৈন্তাপুর পাহাড়টিলা বেষ্টিত হওয়ায় পর্যটকদের কাছে ভীষণ আর্কষণীয়। ভালোমানের খাসিয়া পানের জন্যও সিলেটের জৈন্তাপুরের সুখ্যাতি রয়েছে।
এবার জৈন্তার জারালেবুর নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে। এ উপজেলায় জারালেবু চাষ করে দুই শতাধিক কৃষক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকার উৎপাদিত জারালেবু দেশের বাজার ছেড়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।
জারালেবু চাষ করে ভালো দর পাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্য। পাশাপাশি অন্য ফসলের চেয়ে জারালেবুর চাষ লাভবান হওয়ায় জারালেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক পরিবার। এ উপজেলার ভূমি পাহাড়টিলা শ্রেণির হওয়াতে লেবু জাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল, হরিপুর, জৈন্তাপুর ও ফতেহপুর বাজার জারালেবুর জন্য সিলেটের মানুষের কাছে বেশি পরিচিত। স্থানীয় এই বাজারগুলোতে লেবু, আধালেবু, জারালেবু, কমলা ক্রয় করার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ী, পাইকার ও সৌখিন ভোজনরসিক লোকজন আসেন।
এই উপজেলার জারালেবুসহ টকজাতীয় ফল প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, সিংঙ্গাপুরসহ ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যোর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন।
ফতেপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, শ্যামপুর, হরিপুর, বাগেরখাল, শিকারখাঁ, উৎলারপার, উমনপুর, পানিছড়া, ঠাকুরের মাটি, কালিনঞ্জিবাড়ি বিভিন্ন অঞ্চলে টিলা শ্রেণির ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে জারালেবু চাষ হচ্ছে। অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় জারালেবু চাষ করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
অধিকাংশ কৃষক অন্য ফসল চাষ বাদ দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় জারালেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বেকারত্ব দূর হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। জারালেবুর সুস্বাদু ও টক জাতীয় ফল। লেবু দেখতে অনেকটা চালকুমড়ার মতো। একেকটি জারালেবুর ওজন ২ থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জামাল আহমদ নামের এক স্থানীয় যুবক বলেন, বছরে পর বছর বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদী থাকতো। বছর দুই-এক ধরে এই জমিগুলোতে ভালোমানের জারা চাষ শুরু এই অনাবাদি জমির কদর বেড়েছে। জারালেবুর কলম করা চারা রোপণের এক বছরের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু হয় এবং দশ বছরের অধিক সময় ধরে ওই গাছগুলো থেকে ফল পাওয়া যায়। অনেকেই এখন জারালেবু চাষ করে সুখি জীবনযাপন করছেন।
দলইপাড়া (বাগেরখাল) গ্রামের কৃষক সেলিম আহমদ জানান, জারালেবু চাষের জন্য আমাদের এলাকাটি খুব উপযোগী। আমাদের পূর্ব পুরুষরা জারালেবু চাষ করেছেন শুধু নিজ পরিবারের জন্য। আমি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে শুরু করেছি। বর্তমানে আমার সাড়ে ১৩ বিঘা (৪০৫ শতক) জমি সাত বছরের জন্য চুক্তি নিয়ে ৫টি বাগান করেছি। আমার বাগানগুলোতে পরিচর্যার জন্য ৫০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছে। সব খরচ বাদে বছরে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা উপার্জন করছি।
জৈন্তাপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোয়েব আহমদ জারালেবু চাষ সর্ম্পকে জাগো নিউজকে বলেন, এলাকার কৃষকদের মাধ্যমে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় বিভিন্ন আয়াতনের ১২০টি বাগান রয়েছে। এছাড়া বাগান পরির্চযায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে। জৈন্তাপুরের মাটি ও আবহাওয়া টক জাতীয় ফলের জন্য উপযোগী। জৈন্তাপুর টকও লেবু জাতীয় ফসল কম খরচে বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিএসডি/এএ