নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাহিম জাকারিয়ার বয়স ৫ বছর ৩ মাস। টানা ৭ দিন জ্বর ছিল ওর। সঙ্গে সর্দি-কাশিও। পানি ছাড়া অন্য কিছুই খেতে পারত না সে। পেটে ব্যাথা এবং বমি করত। ৭ দিন তাকে প্যারাসিটামল দিলেও কোনো উন্নতি হয়নি। এরপর হঠাৎ জ্বর বেড়ে গেলে তাকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় শিশুটি টাইফয়েড জ্বরে আক্রন্ত।
শিশুটির পাশে থাকতে গিয়ে একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে মাহিমের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী (৭)। গত ১৬ অক্টোবর তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভাল নেই শিশু দুটির দাদী ও বাবা। তারাও এই টাইফয়েড জ্বরে ভুগছেন।
মাহিম ও আলীর মা হাজেরা বেগম বলেন, মাহিমকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর পেসক্রিপসনের ঔষধ দিয়েও কোনো উন্নতি হচ্ছে না। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টাইফয়েড ধরা পড়ে। এর ৩ দিন পর আমার বড় ছেলে আলীরও একই অবস্থা। আমার মা এবং পরে আমার স্বামীরও টাইফয়েড হয়। তারা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
টানা ১১ দিনের জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭ বছরের শিশু রাজিম হোসেন। সেও টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত। এই শিশুর দেখাশোনা করছেন তার মা সাহেরা খাতুন। তিনি বলেন, বাচ্চার জ্বর নিয়ে অনেক ছোটাছুটি করেছি। কিন্তু ভালো হয়নি। অনেক চেষ্টার পর হাসপাতালে আসা হয়। পরে ডাক্তার বলেন পরীক্ষা করায়ে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করান। পরীক্ষার পর বাচ্চার টাইফয়েড ধরা পড়ে। ৫ দিন ভর্তি থাকার পর এখন অনেকটা স্বাভাবিক আছে।
মাহিম জাকারিয়া, মোহাম্মদ আলীর মতো ১০৩ জন শিশু বর্তমানে এ হাসপাতালে ভর্তি আছে। সর্দি, কাশি ও জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ শিশুকেই দেওয়া হচ্ছে টাইফয়েডের চিকিৎসা। আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ১০৩ জন শিশুকে চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ১ জন শিশু চিকিৎসক। বেড সংখ্যা কম থাকায় মেঝে ও বারান্দায় গাদাগাদি করে সেবা নিতে হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স সাবিনা খাতুন বলেন, প্রতিদিন জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, গত ২০ দিনে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৪৯১ শিশু এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডের মোট বেড সংখ্যা ২২টি। এর মধ্যে ভর্তি থাকা ১০৩ জন শিশুর বিপরীতে বেড রয়েছে মাত্র ১২টি। আর অন্য চিকিৎসার জন্য ১০টি বেড বরাদ্দ রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. ইউসুফ আলী বলেন, হঠাৎ করেই জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী বেড়ে গেছে। আমাদের যে বেড ক্যাপাসিটি তার চেয়ে ৪ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। বেড ফিলাপ হয়ে যাওয়ায় বারান্দাতে চিকিৎসা দিচ্ছি। সীমিত জনবল নিয়ে চিকিৎসা দিতে কষ্টও হচ্ছে। তবুও দিয়ে যাচ্ছি। এখন অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, এটা মৌসুমি জ্বর। এ সময় গরম লাগলে অনেকেই ফ্যান (পাখা) চালান। পরে শরীর ঠান্ডা হলে বন্ধ করেন। ফলে ঘাম আবার শরীরে বসে যায়। আর এ কারণে ঠান্ডা লেগে ফ্লু হয়। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ জন্য অন্য খাবারের পাশাপাশি বেশি করে তরল খাবার খান।
বিএসডি /আইপি