প্রতিবছর দলবদলের সময়ই নেইমারের বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন শোনা যায়। মনে হয়, নেইমার-বার্সার পুনর্মিলনটা বোধ হয় হয়েই যাবে। বাস্তবেও বার্সেলোনা নেইমারকে ফেরানোর চেষ্টা করে; নেইমারও তাঁর পুরোনো ক্লাবের প্রতি নিজের অনুরাগটা প্রকাশ করতে কার্পণ্য করেন না।
এর মধ্যেও যেকাউকে অবাক করতে পারে একটা বিষয়। নিজেদের মধ্যে এত ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও নেইমার-বার্সা টাকাপয়সা নিয়ে কীভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করে। অম্লমধুর এ সম্পর্কে অর্থ একটা বড় ব্যাপারই হয়ে আছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, নেইমার ক্যাম্প ন্যুতে থাকতে তাঁকে পাওনার চেয়েও বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে—এমনটা মনে করছে বার্সেলোনা। ওদিকে নেইমারও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন কেন? বার্সার কাছে তিনিও বকেয়া প্রাপ্য হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাবি করে আপিল করেছেন আদালতে। এ নিয়ে দুই পক্ষের সম্পর্ক কিছুটা হলেও অবনতির দিকে গিয়েছিল। এখন এ ঝগড়া থামতে যাচ্ছে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল মুন্দো জানিয়েছে, দুই পক্ষ ঝগড়াঝাঁটি থামিয়ে এবার সাদা পতাকা ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বার্সেলোনা ও নেইমারের মধ্যে একধরনের অর্থনৈতিক সমঝোতা হয়েছে, যার কারণে এখন বার্সেলোনা নেইমারের কাছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ইউরোর বকেয়া দাবি ছেড়ে দেবে, যদি নেইমার বার্সেলোনার কাছে ৪ কোটি ৭১ লাখ ইউরোর দাবি ছেড়ে দেন।
বার্সা ও নেইমারের মধ্যে টাকা নিয়ে এই ঝামেলার শুরু সেই ২০১৭ সালে। ওই সময়ে পিএসজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা পাকাপাকিভাবে নেওয়ার পর সময়ক্ষেপণ করছিলেন নেইমার। ২০১৬ সালের শেষ দিকে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছিলেন। নবায়নের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে বিশাল অঙ্কের একটি বোনাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বার্সেলোনা। বোনাসটি ২০১৭ সালের আগস্টে বুঝে নেবেন নেইমার, এমনটাই কথা ছিল। এর মধ্যেই পিএসজির প্রস্তাব পান তিনি। উল্টো নিজের বোনাস নিশ্চিত করতে দুই মাস একদম ‘স্পিকটি নট’ হয়ে ছিলেন। এরপর আগস্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজের বোনাসের শর্ত মিটিয়ে পিএসজিতে নাম লেখান তিনি। অর্থাৎ বোনাসটাও পাওয়া হলো, পিএসজিও যাওয়া হলো।
দল বদল করেই বার্সেলোনার কাছে নিজের বোনাসের টাকাটা চেয়ে বসেন নেইমার। কিন্তু বার্সেলোনাও ছেড়ে কথা বলবে কেন? চুক্তি নবায়ন করার ছয় মাস পরই ক্লাব ছেড়ে চুক্তির শর্ত ভাঙার কথা বলে সে বোনাস দিতে অস্বীকৃতি জানায় বার্সেলোনা। প্রাথমিকভাবে বকেয়া বোনাসের অঙ্কটা ছিল ২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। পরবর্তী সময়ে কাতালুনিয়া আদালতে নেইমার বকেয়া হিসেবে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো দেওয়ার জন্য বার্সেলোনার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
কাতালুনিয়ার আদালত এ ব্যাপারে বার্সেলোনার পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন। আদালত জানিয়েছিলেন, বোনাস বেতনেরই অংশ। যেহেতু নেইমার চুক্তির পর যে পরিমাণ সময় ক্লাবে ছিলেন, সে অনুযায়ী তাঁকে বেতন-বোনাস ঠিকই দিয়েছে বার্সেলোনা; এ মামলায় বার্সেলোনার বিপক্ষে কিছু খুঁজে পাননি আদালত। বরং নেইমারকেই ৬৭ লাখ ইউরো ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে বার্সেলোনা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রথমে। কিন্তু নেইমার এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৪ আগস্ট আপিল করেছিলেন। বার্সেলোনাও এর জবাব দিয়েছিল গত ৭ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যেও নেইমারের বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন ভালোভাবেই উঠেছিল।
কিছুদিন আগে পিএসজির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি বাড়িয়েছেন নেইমার। এখন দুই পক্ষের হয়তো মনে হয়েছে, এভাবে কাদা–ছোড়াছুড়ি করা অর্থহীন।
‘অর্থহীন’ একটা ব্যাপার তারা চালিয়ে যাবে কেন!