সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ। অবরোধের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও অনেকটা থমকে আছে মহাখালী বাস টার্মিনাল। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি থাকার পরও চলছে না গাড়ির চাকা। পুলিশ-প্রশাসনের ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যেও আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
সোমবার সকালে মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সকল ধরনের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। তারপরও বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, শেরপুর, সিলেট রুটে দূরপাল্লার কোনো বাস মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের একাধিক বাস টার্মিনাল ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টায় মহাখালী থেকে কোনো পরিবহনেরই বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং পুলিশ বক্সে অন্তত অর্ধশত পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপরই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এসে দেখে যাচ্ছেন এবং সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন। এদিকে, পরিবহন শ্রমিকরা অনেকেই বাসের সিটে বসে ঘুমাচ্ছেন, কেউবা যাত্রীদের জন্য বসার সংরক্ষিত স্থানে শুয়ে আছেন। এনা পরিবহনের কাউন্টার ছাড়া প্রায় প্রতিটি টিকিট কাউন্টারই তালাবদ্ধ, তবে দুয়েকজন দূরপাল্লার যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেছে।
একতা পরিবহনে কাউন্টার মাস্টার রফিক মিয়া বলেন, সকাল থেকেই কাউন্টারে বসে দায়িত্ব পালন করছি, কিন্তু কোনো গাড়ি ছাড়তে পারিনি। দুয়েকজন যাত্রী মাঝেমধ্যে এলেও তারা আবার কাউন্টার থেকে ফিরে গেছেন। আমরাও তাদের আশ্বাস দিয়ে বসিয়ে রাখতে পারছি না।
তিনি বলেন, দিন দিন যেভাবে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, এভাবে তো আমাদের জন্য অনেক সমস্যা। আমরা সরকারি চাকরি করি না, আমরা দিন আনি দিন খাই। বাস বন্ধ হয়ে গেলে আমরা শ্রমিকদের বেতন দেই না। তারা খুবই কষ্ট করে।
এনা পরিবহনের মহাখালী বাস টার্মিনালের কাউন্টার ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস) দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বাস আগের মতোই চলছে। সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত ৯টার মতো বাস ঢাকা ছেড়েছে।
তবে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করে কোনো বাস না চলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সময়টাতে যাত্রী কমই থাকে। আমাদের অধিকাংশ বাসই ভোরে চলে গেছে।
রাকিবুল ইসলাম নামের ময়মনসিংহগামী এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ৯টার দিকে কাউন্টারে এসেছি। বলেছে বাস যাবে, তাই বসে আছি। গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বাড়িতে যেতেই হচ্ছে।
রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, সরকার বা বিরোধী দল কেউ জনগণের কথা চিন্তা করে না। কেউ চায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে, কেউ চায় ক্ষমতায় যেতে। মাঝখানে আমরা সাধারণ মানুষ পড়েছি ঝামেলায়।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাস্তায় সকাল থেকেই পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কোথাও ঘটেনি। তারপরও আমরা সতর্ক রয়েছি।
প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এবং মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে রোববার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। তাদের শরিকরাও এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও আলাদা করে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিন দিন (৩১ অক্টোবর-২ নভেম্বর) টানা অবরোধ পালন করে বিএনপি-জামায়াত। তার আগে ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে তারা।
বিএসডি / এলএম