স্পোর্টস ডেস্ক:
আজ রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শক কতটা কী থাকবে তা নিয়ে তো শঙ্কা থাকছেই। তবে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দারুণ এক উৎসবের মঞ্চ তৈরি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেতে যাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন। দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড এর আগে জিতেনি ২০ ওভারের বিশ্বকাপ। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) শুরু ম্যাচটি নিয়ে ক্রিকেট বোদ্ধাদের আগ্রহের কমতি নেই। ট্রান্স-তাসমান লড়াই বলে কথা! দুই প্রতিবেশী মুখোমুখি।
কিন্তু ওই যে সন্ধ্যায় ম্যাচ, এটা নিয়ে চিন্তিত হতেই পারে দুই দল। বিশ্লেষকরা তো বলেই ফেলেছেন, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে টসেই নাকি নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। এবার এটা স্পষ্ট দেখা গেছে রাতের ম্যাচে পরে ব্যাট করা দলই জিতছে। অনেক কারণের একটি রাতের শিশির! আমিরাতেও এখন শীত আসবো-আসছি করছে। সূর্য ডুবতেই গা জ্বালা দেওয়া সেই গরম আর নেই। এই সময়ে একটু রাত হতেই পড়ছে শিশির।
চলতি বিশ্বকাপেই দেখুন, দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ১২ ম্যাচের ১১টি জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। মজার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে সন্ধ্যায় শুরু ম্যাচে ৯টিতেই রান তাড়া করা দল জিতেছে। তার মানে বোলারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হয়। ফিল্ডারদের সমস্যা তো আছেই। এক্ষেত্রে টস জিতলে আগে বোলিংটাই নিতে চাইবে অজি কিংবা কিউইরা। অ্যারন ফিঞ্চের দল দুবাইয়ে খেলা ৫ ম্যাচের প্রতিটিতেই টস জিতে শুরুতে প্রতিপক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরেই তো সর্বনাশ।
নিউজিল্যান্ড এখানে রাতে খেলেছে একটা ম্যাচ। যেটিতে পরে ব্যাট করে তাদের হারিয়েছে বাবর আজমের দল। তবে ফাইনালের আগে এতোসব ভাবছেন না কেন উইলিয়ামসন। প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে চায় কিউইরা। অজিদের সঙ্গে অনেক লেনদেন মেটানোও বাকি। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রতিবেশীদের কাছে হার মানে তারা। ২০১৯ সালেও একই দৃশ্যপট।
সেই তিক্ত ইতিহাসের ইতি টানতে চান উইলিয়ামসন। ফাইনালের আগের দিন সাফ জানালেন, ‘দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল জিততে পারিনি আমরা। দিন দুটি আমাদের ছিল না। তবে আমরা অতীত না ভেবে সামনে চোখ রাখছি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াই নিয়ে রোমাঞ্চিত। আমাদের প্রতিটি লড়াই সব সময়ই দারুণ রোমাঞ্চ ছড়ায়। এটি আমাদের জন্য দারুণ এক মুহূর্ত। টুর্নামেন্টে দল দারুণ খেলছে। রোববার জিতলে সেই ভাল খেলাটা পূর্ণতা পাবে।’
ঠিক তাই, আসল লড়াইয়ে চুপসে গেলে চোকার্স অপবাদটা পেয়ে যেতে পারে কিউইরা। অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সময়টা ভালো যায় না অস্ট্রেলিয়ারও। ট্রফি নেই। সাত নম্বর চেষ্টায় এসে পারবে কি তারা? ইতিহাস মাথায় রেখে অজি ক্যাপ্টেন ফিঞ্চ জানিয়ে রাখলেন, ‘টি-টোয়েন্টি আমরা এর আগে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু সে সবই অতীত। এবার আমরা ফাইনালে উঠেছি। রোববার সেরাটা দিতেই পারলেই ট্রফি ধরা দেবে।’
টানা ৫ জয়ে উড়তে থাকা পাকিস্তানের স্বপ্ন মাড়িয়ে আসা অজিরা ট্রফি নিয়েই ফিরতে চায় দেশে। দলের প্রতিটি ক্রিকেটারের আত্মবিশ্বাসের পারদ বেশ উঁচুতে। ফাইনালে সামনে রেখে ফিঞ্চ বলছিলেন ‘দেখুন, সেমিফাইনালের পরে বেশ ভালো একটি দিন কেটেছে আমাদের। ছেলেদের আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। ফাইনাল ম্যাচটায় কখন নামবে সেটাই ভাবছে। ক্রিকেটে দুই দলের অসাধারণ ঐতিহ্য রয়েছে। এটা শুধু ক্রিকেটে নয়, প্রতিবেশী হিসেবে সব পর্যায়ে আছে।’
যদি শক্তির বিচার করা হয় তবে বলতে হবে নিউজিল্যান্ডের বোলিং এগিয়ে, অজিদের ব্যাটিং। কিউইদের একাদশে ৫ স্পেশালিস্ট বোলার। যারা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে খেলতে জানেন। টিম সাউদি, ট্রেন্ড বোল্ট, ইশ সোধি কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন ডেভিড ওয়ার্নার-স্টিভেন স্মিথদের। অবশ্য দুই দলের জন্যই পাওয়ার প্লে হতে পারে আসল পরীক্ষা। যেখানে এগিয়ে গেলে জেতার পথটাও বেশ প্রশস্ত।
তবে ইতিহাস যদি অনুপ্রেরণার নাম হয় তবে এগিয়ে থাকবে ফিঞ্চের দল। আইসিসির প্রতিযোগিতায় কিউইদের সঙ্গে খেলা প্রতিটি নকআউট ম্যাচেই জিতেছে অজিরা। ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে শুরু। তারপর যতবারই দেখা হয়েছে, হতাশ হয়েছে ব্ল্যাকক্যাপসরা।
একইভাবে টি-টোয়েন্টি হেড টু হেডেও পিছিয়ে নিউজিল্যান্ড। এই ফরম্যাটে তারা মুখোমুখি হয়েছে মোট ১৪ বার। যেখানে অস্ট্রেলিয়া হেসেছে ৯টিতে। নিউজিল্যান্ড জিতেছে বাকি ৫ ম্যাচে। ২০ ওভারের বিশ্বকাপে দেখা হয়েছে মাত্র ১ বার। ২০১৬ সালে সুপার টেনের ম্যাচে মাত্র ৮ রানে হারের যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছাড়ে কিউইরা।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অনেক দেনা মেটানের পালা কিউইদের। প্রতিবেশী দেশ বলে একটা মধুর বৈরিতা তো থাকেই। সঙ্গে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে জেতা ম্যাচ হারার দুঃখ তো এখনো পোড়ায় তাদের। সুপার ওভারেও টাই ম্যাচে যেখানে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোর সুযোগটা নিয়ে হেসে উঠেছিল ইংল্যান্ড। সেই দলটিকেই হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়েছেন কেন উইলিয়ামসনরা। ক্রিকেটটা এখনো নিষ্ঠুর এক খেলা হয়েই আছে তাদের কাছে।
এবার যদি সেই যন্ত্রণা ভুলে হেসে উঠার মঞ্চ তৈরি উইলিয়ামসনদের। তবে রাতটা হতে পারে ফিঞ্চদেরও। এটাই ক্রিকেট, একদল হাসবে, ট্রফি হাতে উড়বে! আরেক দল রাজ্যের সব কষ্ট নিয়ে পুড়বে, কাটাবে ঘুমহীন রাত! দৃশ্যটা তো অনুমান করাই যাচ্ছে। কিন্তু আজ রাতে কে উড়বে আর কারাই বা পুড়বে? কী ক্রিকেট রোমাঞ্চ জমা আছে মরুর বুকে?