আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছেন। আর এই পদক্ষেপ সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কফি ও জনপ্রিয় খাবার বার্গারের মাংসের দামে।
মূলত শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন বাজারে বেড়ে যেতে পারে কফি ও বার্গারের দাম। শুক্রবার (১১ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা বৈশ্বিক কফি বাজারে বড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কফির দাম সাম্প্রতিক উচ্চমূল্যের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্বে কফির সবচেয়ে বড় উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিল। অপরদিকে, কফির সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি মানুষ কফি পান করেন।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৮.১৪ মিলিয়ন ৬০-কেজি ব্যাগ কফি আমদানি করেছে ব্রাজিল থেকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কফি ব্যবহারের ৩৩ শতাংশ। ফলে, নতুন শুল্ক কার্যকর হলে এই আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কফি আমদানি প্রতিষ্ঠান এমজে নিউজেন্ট অ্যান্ড কো’র মালিক মাইকেল নিউজেন্ট বলেন, “এত বড় শুল্কে এই আমদানি একপ্রকার থেমে যাবে। ব্রাজিলিয়ান রপ্তানিকারকরা এই শুল্কের বোঝা বইবে না, আমেরিকান কফি রোস্টাররাও পারবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “ফলাফল খুব সরল: ব্রাজিল তার কফি অন্য দেশে বিক্রি করবে, আর যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশ থেকে কিনবে — যেমন কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, পেরু বা ভিয়েতনাম — কিন্তু এই দেশগুলোর কাছে ব্রাজিলের মতো পরিমাণ বা কম মূল্যে কফি পাওয়া সম্ভব নয়।”
অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে কফির সরবরাহ তুলনামূলক কম এবং দামের দিক থেকেও বেশি। তাই, বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করতে গেলে তা আরও ব্যয়বহুল হবে। মার্কিন ট্রেডিং হাউসের একজন পরিচালক বলেন, “ব্রাজিলের কফি সস্তা ও নির্ভরযোগ্য বলেই সবাই বেশি কিনে। এখন প্রশ্ন হলো, শুল্কসহ যুক্তরাষ্ট্র কি এই কফি কিনবে? সম্ভাব্য উত্তর — না।”
এর মধ্যে বিশ্ববাজারে কফির দাম আগেই রেকর্ড বা তার কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে। সরবরাহ সংকটের কারণে গত বছর কফির দাম ৭০ শতাংশ বেড়েছিল। এখন এই নতুন শুল্ক দামে আরও চাপ তৈরি করছে। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে আরাবিকা কফির ফিউচার মূল্য বৃহস্পতিবার ১.৩ শতাংশ বেড়ে গেছে।
পৃথক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছেন, যা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় খাবার বার্গারের মাংসের দামে। দেশটির গরুর মাংসের ঘাটতি এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক কার্যকর হলে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গরুর মাংসের প্রবাহ কমে যাবে, আর আমেরিকার খাদ্য প্রস্তুতকারকদের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে, যা আরও ব্যয়বহুল হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই গরুর সরবরাহ সংকটে রয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন কমে ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে (২৬.৪ মিলিয়ন পাউন্ড) এবং দেশের পশুর সংখ্যা সাত দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। কয়েক বছর ধরে চলা খরার কারণে গবাদি পশু পালনের খরচ বেড়ে গেছে, ফলে অনেক খামারি গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে মেক্সিকো থেকে পশু আমদানিও বন্ধ রাখা হয়েছে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ নামে একধরনের মাংস-খেকো পরজীবীর কারণে।
এ অবস্থায় আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক ব্রাজিলীয় গরুর মাংসের ওপর মোট শুল্ক ৭৬ শতাংশে উন্নীত করতে পারে, যা আমদানিকারকদের জন্য ওই মাংষ যুক্তরাষ্ট্রে আনা প্রায় অসম্ভব করে তুলবে।
বিফ আমদানিকারক মার্কিন কোম্পানিগুলোর পরামর্শক বব চুডি বলেন, “এভাবে থাকলে, ব্রাজিল থেকে এক পাউন্ড মাংসও আমদানি করা সম্ভব হবে না”। তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি না কী করব, পুরো আমদানি ব্যবসা স্থবির হয়ে গেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম ইতোমধ্যে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে দেশটির খাদ্য প্রস্তুতকারকরা আমদানি বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গরুর মাংস আমদানি দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন, যা মোট আমদানির ২১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক আরোপে শুধু কফি বা মাংস নয়, কমলার রসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত ‘লিন বিফ’ বা চর্বিহীন গরুর মাংস ব্যবহার করে ঘরোয়া গরুর মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে বার্গারের মাংস তৈরি করা হয়। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো থেকে এসব মাংস আসে। তবে নতুন শুল্কের ফলে অনেক আমদানিকারক বিকল্প উৎসে যেতে বাধ্য হবেন, যার খরচ আরও বেশি।