নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। সেইসঙ্গে রপ্তানিতেও সংকট তৈরি হতে পারে। চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশ হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
বুধবার (০৯ এপ্রিল) নগরীরর এডিবির ঢাকা অফিসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে এডিবির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট চন্দন সাপকোটা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি আরোপ হলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশসহ এডিবিভুক্ত সব দেশে আর্থিক সংকট দেখা দেবে। ফলে শুল্ক কমানো প্রসঙ্গে এডিবির পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে বলা হবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে য়ুন জেওং বলেন, আমাদের হেড অফিস থেকে এ বিষয়ে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যদি দেয় তবে তখন আমরা পদক্ষেপ নেবো।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কমছে, সামনে এটা ৮ শতাংশের ঘরে থাকবে। তাহলে এডিবি পূর্বাভাসে ১০ শতাংশের ওপরে দেখাচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চন্দন সাপকোটা বলেন, মনিটারি পলিসি, বিনিয়োগ কম, এছাড়া ঋণ খেলাপিও বেশি। দেশে এখনও রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। এসব কারণেই মূলত কমবে প্রবৃদ্ধি। বর্তমানে মাসওয়ারী মূল্যস্ফীতির তথ্য দিচ্ছে। তবে বছর শেষে দেখবেন এটা ১০ শতাংশের ওপরে দেখাবে।
এডিবি জানায়, ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বাণিজ্য চ্যালেঞ্জে পড়বে। ২ এপ্রিল নতুন মার্কিন শুল্ক ঘোষণার আগে চূড়ান্ত করা আঞ্চলিক পূর্বাভাসে দেখা গেছে যে, বাণিজ্য অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি এবং উচ্চ শুল্কের কারণে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ হবে এশীয়া অঞ্চলে। উচ্চ মার্কিন শুল্কের কারণে চীনের সঙ্গে প্রত্যাশিতভাবে বাণিজ্য কমবে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন মার্কিন শুল্কের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য মার্কিন নীতি পরিবর্তন, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং চীনের সম্পত্তি বাজারে প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ অবনতিতে রয়েছে। যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে গতি থাকলেও এডিবি মনে করে, দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা, রাজনৈতিক পালাবদল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি, শিল্পে অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে। জরুরি কাঠামোগত সংস্কার করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এ দেশীয় প্রধান।