নিজস্ব প্রতিবেদক:
যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে ট্রেনে ভ্রমণকেই বেছে নিতে চান যাত্রীরা। কিন্তু এই ভ্রমণ এখন ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও সীতাকুণ্ড এলাকায় প্রায়ই চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। ২০১৩ সালে ভাটিয়ারীতে চলন্ত ট্রেনে বাইরে থেকে ছোড়া পাথরের আঘাতে নিহত হন প্রকৌশলী প্রীতি দাশ (২৪)। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে ছোড়া ঢিল থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যায় ১৩ মাস বয়সী শিশু।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী, পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে এসব আইনে কারও শাস্তি হয়েছে, এমন নজির নেই।
এমন ঘটনা রোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তৎপর থাকলেও মনোবিকৃতি ঘটা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। জিআরপি সূত্রে জানা যায়, ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় জড়িত ৮০ ভাগই বস্তির শিশু-কিশোর এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি। বস্তির শিশুদের আটক করা হলেও প্রমাণের অভাবে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত নয় মাসে রেলওয়ের বিভিন্ন রুটে ১১০টি চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পাথর নিক্ষেপের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৯ জন যাত্রী। ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০৩টি। চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া হয় পাহাড়তলী এবং সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে।
পাহাড়তলী ও সীতাকুণ্ডের রেলপথে দুইপাশে অনেক বস্তি ও জঙ্গল ঘিরে দিন-রাত চলে বখাটেদের আড্ডা, মাদক সেবন সহ নানান অসামাজিক কার্যকলাপ। ফলে এসব এলাকা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ট্রেন যাত্রীদের জন্য।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ছে, তারা সেটাকে অপরাধ বলে মনে করে না। শুধু আনন্দ পেতে অনেকে এই কাজ করছে। আবার অনেকে হয়তো ভাবে, পাথর ছোড়া হলে ট্রেন থামবে কিংবা কিছু জিনিসপত্র কুড়িয়ে পাওয়া যাবে। মূলত, এটা করে তারা অসুস্থ আনন্দ পাচ্ছে।
জানা গেছে, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে আরও দেড় হাজার জনবল চেয়েছে রেলপথ বিভাগ। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদ্যমান জনবলের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৫০০ জনবল বাড়ানো হলে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। এ ঘটনা এড়াতে ট্রেনের জানালায় তারের জাল (নেট) বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আওতাধীন রেলপথের যে জায়গাগুলো থেকে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া হয় সেগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ এবং নরসিংদী সদর, জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকা।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে আমরা কাজ শুরু করেছি। চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষকে বুঝাচ্ছি পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে। শিক্ষকদেরও বলছি, যাতে তারা পাঠদানেও এ বিষয়টি তুলে ধরেন। জুমার দিনেও আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদে গিয়ে বক্তব্য দিচ্ছি। এলাকার লোকজনকে সচেতন করছি।
তিনি আরও বলেন, পাথর নিয়ে কেউ হাঁটলেও তাকে আটক করছি। বাচ্চা হলে মা বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। এছাড়া কিছু কিশোর যখন চলন্ত ট্রেনে উঠতে চায় তখন যাত্রীরা তাদের বাধা দেয়। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পাথর নিক্ষেপ করে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ঠেকাতে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অভিযানের পাশাপাশি আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালাচ্ছি।
বিএসডি/আইপি