বর্তমান সময় ডেস্ক:
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। দলটির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত এ ব্যক্তির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সন্দেহের চোখে দেখছে হাইকমান্ড। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের পেছনে তিনি এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ দূরত্ব তৈরি হয়। সদ্য নির্বাচন কমিশন গঠনকে কেন্দ্র করে তা চরমে পৌঁছায়।
বিশেষ করে সার্চ কমিটির আমন্ত্রণে গিয়ে সম্ভাব্য নাম দেওয়ার বিষয়টিকে তারা মেনে নিতে পারছেন না। তার নামের মধ্যে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের নামও ছিল। সার্চ কমিটিতে তার দেওয়া নাম নিয়ে সেসময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি ডা. জাফরুল্লাহর মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের নাম দিয়েছে। এরপর হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পর ডা. জাফরুল্লাহ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির নেতাকার্মীরা মনে করেন, এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। প্রথমত, এর মাধ্যমে বিএনপি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেই-এমন বক্তব্য রাখার সুযোগ কমে এসেছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের পছন্দের ব্যক্তিকে নয়, বরং সরকারের সমালোচক ব্যক্তির পছন্দের লোককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন একটি ধারণা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
জাফরুল্লাহর এ ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে ২৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ বিভাগে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ নন। তিনি যা বলেছেন, তা তার নিজস্ব বক্তব্য। নির্বাচন বিষয়ে তিনি বিএনপির পক্ষে কথা বলার কেউ নন।
এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির অনুষ্ঠানে এসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দল সম্পর্কে যা খুশি তা বলবে, এটা হতে পারে না। তার কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তিনি আসলে কাদের হয়ে কাজ করছেন, এ প্রশ্নও উঠেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়া এবং ইসি গঠনের পর ইতিবাচক মন্তব্য করায় ডা. জাফরুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ হয় বিএনপি। এ অবস্থায় দলের হাইকমান্ড জাফরুল্লাহকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ না জানানো এবং উনি কোনো অনুষ্ঠানে থাকলে সেখানে নেতাকর্মীদের না যেতে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসি নিয়ে তার ভূমিকার পর জাফরুল্লাহকে পুরোপুরি বর্জন করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দলের একটি অংশ মনে করছে, জাফরুল্লাহ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাকে এভাবে এড়িয়ে চলা উচিত হবে না। প্রকাশ্যে এভাবে বিরোধ বাড়লে দলই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই তারেক রহমান ইস্যুতে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা গণমাধ্যমে তার দেওয়া বক্তব্য সবার নজরে আসে। সরকারের নানা ব্যর্থতার বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বারবার তারেক রহমান ইস্যুতে বেশ সোচ্চার। তার এমন বক্তব্যের পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে তার সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি তার সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায়নি বিএনপি। তাকে এড়ানোর জন্য নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে। তাকে এড়িয়ে চলার জন্য দলের নেতাকর্মীদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিএনপি সমর্থিত কিছু সংগঠন তাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিল। এখন থেকে কেউ যাতে তাকে আমন্ত্রণ না জানায়, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমি থাকলে বিএনপি নেতারা অনুষ্ঠানে আসবে না বা আমাকে বর্জন করবে, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তারা যদি মনে করে আমি থাকলে অসুবিধা হতে পারে, তাহলে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্নতার কারণে বিএনপি তাদের ভুল বুঝতে পারছে না। অনুধাবন করতে পারছে না কে তাদের বন্ধু আর কে শত্রু।
কয়েক মাস আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, তারেক তুমি দুই বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারলে বিলেতে (বিদেশ) লেখাপড়ায় যুক্ত হয়ে যাও, সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।’ তার ওই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে যান সভায় উপস্থিত থাকা ছাত্রদলের কয়েক নেতা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ওমর ফারুক কাওছার সালাম ডা. জাফরুল্লাহকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি বিএনপির কে? আপনি বিএনপি নিয়ে উলটাপালটা কথা বলেন কেন?
সূত্র জানায়, দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করায় বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ হারান জিএম সিরাজ।
বিএসডি/ এফএস