নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে হয়নি বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হামলা ও ভাঙচুরের পর সেখানে অনুষ্ঠান বাতিল করে আয়োজকরা। যদিও আজ (সোমবার) সকাল থেকে কেউ কেউ সেখানে জেনে আবার কেউ না জেনেও এসে ঘুরে গেছেন।
অনু্ষ্ঠান না হলেও ডিসি হিল এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের একাধিক টিম। হিলের প্রবেশমুখে রয়েছে আচওয়ে। প্রতি বছর এখানে মেলা বসে। পাওয়া যায় বাঙালির নানা ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র। তবে এবার এরকম দোকান বসেনি। অনুষ্ঠান বাতিলের খবর না জেনে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। তবে এগুলোতে নেই তেমন বেচা-কেনা।
১৯৭৮ সালে প্রথমে ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়। এরপর প্রতিবছরই এখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ নামে একটি সংগঠন। এ বছরও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চায় সংগঠনটি। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রথমদিকে প্রশাসন সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়নি। সবশেষ গত ১০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজক কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে এক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর গানের তালিকা প্রশাসনকে আগেই দেখাতে বলা হয়। একই সঙ্গে পহেলা বৈশাখের এ অনুষ্ঠান দেখভাল করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটিও করে দেওয়া হয়।
এরপর গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদ্যাপন আয়োজনের প্রতিবাদে’ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস), বিএনপির সহযোগী সংগঠন মিলে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সেখান জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া স্মারকলিপিতে বিভিন্ন সংগঠনকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
পরবর্তীতে এদিনই প্রায় ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ডিসি হিলের পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মঞ্চে তুলতে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সংগঠকদের কাছে এ তালিকা পাঠানো হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, নরেন আবৃত্তি একাডেমি ও খেলাঘর।
এদিন সন্ধ্যায় একদল লোক ডিসি হিল এসে অনুষ্ঠান মঞ্চ ভেঙে ফেলার পাশাপাশি চেয়ার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে। এরপর অনুষ্ঠান বাতিলের ঘোষণা দেয় আয়োজকরা।
এদিকে, ডিসি হিলে না হলেও সোমবার সকাল থেকেই নগরের সিআরবি শিরিষ তলা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও জেলা শিল্পকলা একাডেমিতসহ বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের নানা আয়োজন ছিল। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে নগরের বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বের হয় ঐতিহ্যের শোভাযাত্রা। এটি চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে আলমাস, কাজীর দেউড়ি মোড়, এস এস খালেদ রোড, প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ইউটার্ন হয়ে সার্সন রোড দিয়ে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় তরমুজের ফালি, বাঘ, ইলিশ, শান্তির পায়রা ও লক্ষ্মী পেঁচাসহ বিভিন্ন মোটিফ নিয়ে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সকালে অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে আয়োজিত নববর্ষ বরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে অংশ নেন সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রাটি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শোভাযাত্রায় উপস্থিত সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র বলেন, সবাই মিলে একটি ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি চট্টগ্রাম গড়তে হবে। এজন্য নগরবাসীর সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। চট্টগ্রাম শুধু একটি শহর নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য একটি স্বপ্নের নগরী-যা গড়তে হলে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
সিআরবির শিরীষতলায় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের সমবেত বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করে। এছাড়া নগরের নন্দনকাননে একটি সংগঠনের আয়োজনে চলছে ছোটোদের বৈশাখী মেলা।