যমজ ভাই মো. হোসাইন ও মো. হাসান। বয়স ৮ মাস পেরিয়েছে। মিনিটখানেকের ব্যবধানে পৃথিবীর আলো দেখেছে তারা। তাই সবকিছুতে মিল দুই ভাইয়ের। একসঙ্গে খায়, একসঙ্গে ঘুমায়। স্বভাবেও মিল দুজনের। এখন দুজনে একসঙ্গে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। দুই ভাই এখন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হোসাইন-হাসানের বাবা সাইফুল ইসলাম। মা শাহনাজ আকতার। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের জুবিলি রোডে। বেসরকারি চাকরি করেন সাইফুল। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে টানাটানির সংসার। তাই একসঙ্গে ছোট্ট দুই সন্তান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই দম্পতি।
গতকাল সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন সাইফুল ও শাহনাজ।
শাহনাজ বলেন, শুরুতে হোসাইনের জ্বর আসে। এরপর হাসানও জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত শনিবার দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চা দুইটা জ্বরে খুব কষ্ট পাচ্ছে। কষ্ট সহ্য করতে পারছে না।’
অন্যদিকে সাইফুল বলেন, ‘বাচ্চা দুইটাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে আছি। অফিসেও যেতে পারছি না। বাচ্চা দুইটাকে নিয়ে আমি আর শাহনাজ হাসপাতালে পড়ে আছি।’
‘জন্মের পর থেকে বাচ্চা দুইটার নাওয়া, খাওয়া, ঘুমানো—সবকিছু একসঙ্গে। স্বভাবেও অনেক মিল। এখন অসুস্থও হলো একসঙ্গে। জানি না কবে সুস্থ হবে। মাসুম বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে! ওদের কষ্ট দেখে কিছুই ভালো লাগছে না।’—এভাবেই বলছিলেন বাবা সাইফুল।
জ্বর বাড়লে হোসাইন-হাসান একসঙ্গে কেঁদে উঠছে। তখন তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মা ও বাবাকে। দুজন মিলে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কেউ সন্তানের মাথা ধুয়ে দিচ্ছেন। কেউবা খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। অসুস্থ সন্তানদের নিয়ে এভাবেই হাসপাতালে সময় কাটছে সাইফুল-শাহনাজ দম্পতির।
শাহনাজ বলেন, ‘অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বাচ্চা দুটি কিছুই খেতে চাইছে না। জোর করে খাওয়াতে হচ্ছে। জ্বর বাড়লে কান্নাকাটি করছে। কবে যে ওরা ভালো হবে।, কবে যে আগের মতো খেলবে, জানি না। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে।’
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হক গতকাল বলেন, ‘আজ আমাদের হাসপাতালে মোট ৮৩ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে হোসাইন-হাসানসহ ৩৪টি শিশু রয়েছে।’
চট্টগ্রামে চলতি বছর মোট ৯ হাজার ২৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭২ ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে ২৫টি শিশু রয়েছে। চলতি মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ২৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ১৯ জন। হাসপাতালে শয্যাসংকটও দেখা দিয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকছে। এ পরিস্থিতি এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযোগী। তাই মশা কমছে না, ডেঙ্গুও কমছে না।
এ পরিস্থিতিতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। জ্বর এলে বা ডেঙ্গু শনাক্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগীদের হাসপাতালে আনতে হবে। সরকারি হাসপাতাল কখনোই রোগী ফেরত পাঠায় না, এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
বিএসডি/এসএস