নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রধান দুই শহরের দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাইছে সরকার। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে যেতে রেল বা সড়কে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। দ্রুত গতির বুলেট ট্রেনের মাধ্যমে এ পথ এক ঘণ্টায় পার হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও শেষ হয়েছে। এখন অর্থায়নের অপেক্ষা। এটি হতে যাচ্ছে যোগাযোগ খাতের দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প, যাতে খরচ পড়বে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবককাঠামো) মো. কামরুল আহসান বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে দ্রুতগতির রেলের জন্য এরই মধ্যে সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এতে ব্যয়সহ বিস্তারিত ডিজাইনও করা হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার বা ৯৭ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। এখন সরকার অর্থায়নের উৎস খুঁজছে। এ নিয়ে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কাজ করছে। অর্থায়নের নিশ্চয়তা পেলে দ্রুতই কাজ হাতে নেয়া হবে। কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে অর্থায়নে আগ্রহও দেখিয়েছে। তবে এখনও অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
রেলওয়ে বলছে, এই ট্রেন বিরতি দিয়ে এক ঘণ্টা থেকে সোয়া ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছবে। বিরতিহীন চলাচল করলে চট্টগ্রাম পৌঁছতে সময় লাগবে এক ঘন্টারও কম, ৫৫ থেকে ৫৭ মিনিট।
শুরুতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বুলেট ট্রেনটি চলানোর প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজার পর্যন্ত তা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সমীক্ষা অনুযায়ী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২২৭ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। থাকবে ছয়টি অত্যাধুনিক রেলস্টেশন। পথের পুরোটাই হবে স্বয়ংক্রিয় সিগনাল ব্যবস্থাসম্পন্ন। ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার।
হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণ করা হবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম রুটে। স্ট্যান্ডার্ড গেজের দুটি লাইন নির্মাণ করা হবে, যেগুলোর অ্যাক্সেল লোড হবে ১৭ টন ধারণক্ষমতার। বিদ্যুৎচালিত উড়াল রেলপথটি হবে পাথরবিহীন।
প্রতিদিন এ পথে ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এ রেলপথ বর্ধিত করা হবে।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬৫ কিলোমিটার। তবে বেশ কয়েকটি জেলায় ঘুরপথের কারণে রেলপথে দূরত্ব ৩২৫ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে সাধারণ ট্রেনের সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। কিন্তু সমীক্ষা অনুযায়ী, নতুন রেলপথে এ দূরত্ব কমবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার, কেননা ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে ট্রেন যাবে চট্টগ্রাম।
বুলেট ট্রেন রেল খাতে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ট্রেন জ্বালানি সাশ্রয়ী, পাশাপাশি উচ্চ গতির। এতে ভ্রমণ সময়ই শুধু কমবে না, যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি পাবে।
অর্থায়নে আগ্রহী চীন
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সমীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই এ প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান। চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) যৌথভাবে কোম্পানি গঠন করে রেলপথটি নির্মাণ করতে চায়। ঋণের সংস্থান ও রেলপথটি নির্মাণের দায়িত্ব নেবে প্রস্তাবিত কোম্পানি। ঋণ শোধ করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে সময় পাবে ২০ বছর। পাঁচ বছর রেলপথটি পরিচালনার পর তা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে।
রেলপথ থেকে যে আয় হবে, তা জমা হবে রেলওয়ের কোষাগারে। দুটি সংস্থারই (সিআরসিসি ও সিসিইসিসি) চীন ও চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে হাইস্পিড রেলপথের উন্নয়ন ও নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। শুরুতে প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিলেও তা আর এগোয়নি।
এর আগে কোরিয়ান দুই কোম্পানি হাইস্পিড রেল নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি রেলওয়ে।
গত বছর রেলওয়ের জন্য ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে। তবে ইঞ্জিনগুলোয় দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়নি। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি করা এসব ইঞ্জিন।
এখন নতুন করে অর্থায়নের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। ইআরডির মাধ্যমে চীন ও কোরিয়ার বাইরেও অন্য উৎস থেকে অর্থায়ন খোঁজা হচ্ছে।
বিএসডি / আইকে