বর্তমান সময় ডেস্ক:
বাংলাদেশের অনেক অভিনব উদ্যোগ দেশের বাইরেও সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন সফটওয়্যার নির্মাতারা। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
তথ্য আহরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজি বলা হয়। মূলত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাথে মিলেমিশে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। তারপরও এ প্রযুক্তি বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে কম্পিউটার। কম্পিউটার-নির্ভর ইন্টারনেট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সমগ্র বিশ্বটিই এখন এক বিশাল তথ্যভান্ডারে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে । বিগত সাত বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের দ্বারগোড়ায়। বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক এই অবিস্মরণীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ডিজিটাল রেনেসাঁ বা ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে। ইউরোপের রেনেসাঁ বিপ্লবের কথা আমরা জানি। সেই বিপ্লব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের সূচনা করেছিল। বাঙালী হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লবের বিষয়টি এক সময় আমাদের কাছে সোনার হরিণ বলে মনে হতো। কিন্তু সময়ের পালা বদলের ধারায় বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বিপ্লবের নবদিগন্তের সূচনা করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘শিক্ষা মানুষকে কেবল শিক্ষিতই করে না, বরং গৌরবান্বিতও করে।’ এ কথার নেপথ্যে যে গভীর অর্থটি লুকিয়ে আছে তা হলো- শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান মানুষ ব্যবহার করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশকে বিকশিত করবে। এর মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিই গৌরবান্বিত হবে না, দেশও গৌরবে অভিষিক্ত হবে। বর্তমান সরকার মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ডিজিটাল আইল্যান্ড ও ফোর জি সেবা চালুর প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার স্বল্প সময়ে তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছে, যার সুফল গ্রামের মানুষও ভোগ করছে। হাইটেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে সরকার প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রজন্ম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যারা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
প্রযুক্তির হাতে ধরেই আসবে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, রোবোটিকস ও বিগ ডেটা অ্যানালাইসিসের মতো নানা কাজ। অর্থাৎ, প্রয়োজন হবে দক্ষ কর্মীর। আগামী এক দশকের মধ্যে আরও নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এসে নতুন চাকরি সৃষ্টি করবে এবং প্রচলিত অনেক চাকরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
এজন্য যুগোপযোগী দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশের সফটওয়্যার কর্মীরা সেটাই করছে। জেনেক্স ইনফোসিস, সিনেসিস আইটি, ব্রেইনস্টেশন, ইক্সোরা, বিজেআইটি, প্রাইডসিস, সিসটেক ডিজিটাল, ব্র্যাকআইটি, মাইসফট, মিডিয়াসফট, ইরা ইনফোটেক, নেসেনিয়া, টিকন, পিপপল ’এন টেক, এনআইটিএস, বিভিক্রিয়েটিভস, টেকনোভিস্তা, আমরা টেকনোলজিস, বি-ট্র্যাক টেকনোলজিস, এডিএন টেকনোলজিসের মতো আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে।
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছবিযুক্ত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ তৈরি করে উক্ত ডাটাবেইজের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় নেয়া হচ্ছে।শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণে শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকারও শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছে। শিক্ষার প্রচলিত ধারার শিখন-শেখানো পদ্ধতির পরিবর্তে শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগ ঘটানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম ও স্পীকারের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এ শ্রেণীকক্ষকেই বলা হচ্ছে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’।
চিকিৎসা সেবায় তথ্যপ্রযুক্তি-
তথ্যপ্রযুক্তি চিকিৎসা সেবায় অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। এ ছাড়াও দেশে টেলি-মেডিসিন সেবার দ্রুত বিকাশ ঘটছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার স্কাইপের মাধ্যমে ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। একবার অনলাইনে নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে রোগী বাড়িতে বসেই তথ্য পেয়ে যাবেন তার ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনে। যে সব ডাক্তার এই সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন তারা পুনঃপুন আপডেট পাবেন সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনকৃত রোগীর সার্বিক ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন খুব নিমিষেই। এই সফটওয়্যার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যেমন রোগের চিকিৎসা চলছে, তেমনি গ্রামাঞ্চল বা মফস্বলের প্রশাসনিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি উদ্ভাবিত হয়েছে বেসরকারি খাতে, মাঠপর্যায়ে। গ্রামে-গঞ্জে সীমিত আকারে ইন্টারনেট বিস্তৃত হওয়ার ফলে মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক স্বাস্থ্য ডেটা সংগ্রহ, রোগীদের ফলোআপ এবং স্বাস্থ্যসচেতনতার বেশ কিছু কাজ ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্যায় এসএমএসভিত্তিক কিছু কাজও ফলপ্রসূ। কোনো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীদের তথ্যব্যবস্থাপনায় ও রোগপরিচর্যায় মুঠোফোনের কার্যকর ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তিসেবা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি-
সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার মানব সভ্যতাকে সহজ করে এসেছে। বর্তমান সময়ে একদিন দিন তো দূরের কথা এক মুহূর্তও বিজ্ঞান ছাড়া অচল। প্রাকৃতিক দূর্যোগ হোক কিংবা মারণ অসুখ সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান মানবজাতির মঙ্গলে রুখে দাঁড়িয়েছে।খুব সহযেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই পরীক্ষার ফলাফল জানা যায়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা যায় ও অনলাইন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ঘরে বসেই চাকরির দরখাস্ত করা যায় এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র অনলাইন থেকে প্রিন্ট করা যায়।ইন্টারনেটে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ডার দেওয়া এবং বিল পরিশোধ করা যায়।