নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর সদর উপজেলায় রাস্তার ওপর প্রকাশ্যে তরুণী-তরুণকে হাত-পা বেঁধে জুতাপেটা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে প্রধান অভিযুক্ত চূড়ামনকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আনিসুর রহমানসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গতরাতে আনিসুরসহ তার ২ সহযোগী আব্দুল আলীম ও আইয়ুব আলী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কারাগারে গেছেন অপর সহযোগী ভুট্টো।
জামিনের বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন যশোর সদর কোর্ট জিআরও মুজিবুর রহমান ও হাজতখানা ইনচার্জ এ টি এস আই সন্তোষ।
স্পর্শকাতর মামলায় ইউপি সদস্যসহ আসামিরা জামিন পাওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা জেলায়। মামলায় দুর্বল ধারা প্রয়োগ করায় আসামিরা জামিন পেয়েছেন বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মোটরসাইকেলে করে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এক যুবকের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে আবদুলপুর গ্রামে পৌঁছালে অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানসহ কয়েকজন তাদের আটক করেন। পরে শত শত অনেক মানুষের সামনে তাদের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। খবর পেয়ে ওই তরুণীর পরিবার গিয়ে তাদের আহতাবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। তরুণীকে হাত-পা বেঁধে ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের পেটানোর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককেও একইভাবে নির্যাতন করা হয়।
তরুণীর বাবা অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন যশোর কোতোয়ালি থানায়।
পরে ডিবি পুলিশ শুক্রবার গভীর রাতে ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানসহ অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে আসামিদের গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য না দিয়ে পুলিশ গোপনে গতকাল বিকেলে ৪ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করে। সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম ৩ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। অপর আসামি ভূট্টোকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সন্ধ্যায় আসামিদের জামিন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় মানুষ। অনেকে হতাশ হয়েছেন, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলায় শ্লীলতাহানির ধারা দেওয়া হয়েছে ৩৫৪। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শ্লীলতাহানির জন্য ১০ ধারা বলবত আছে, যা জামিন অযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘মামলা রেকর্ড করার সময় যদি ৩৫৪ ধারা না দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা করা হতো, তাহলে আসামিরা কেউই জামিন পেতেন না। সবাই কারাগারে যেতেন। কিন্তু ভুট্টোর বিরুদ্ধে ৩৭৯ ধারার অপরাধ উল্লেখ করায় তার জামিন হয়নি।’
মামলাটিতে মোট ৬টি ধারা রয়েছে, তার মধ্যে ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩৫৪/৫০৬ ধারা, যা জামিন যোগ্য।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিসুরসহ ৩ সহযোগী এলাকায় গিয়ে বাদী পক্ষকে হুমকি দিচ্ছেন।
আনিসুরের ভয়ে বাদী পক্ষের কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।
তবে জামিনে মুক্তি পাওয়া ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার জন্য একটি মহল এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই সালাউদ্দিন জানান, বিষয়টি চাঞ্চল্যকর। তিনি সব আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন।
‘তবে গতরাতে লোক মারফত জানতে পারি, ইউপি সদস্যসহ ৩ জনের জামিন হয়েছে। জামিন হওয়ায় মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে’, যোগ করেন তিনি।
বিএসডি/ এলএল