চট্টগ্রাম টেস্টের সকাল দু’হাত ভরে দিচ্ছে বোলারদের। প্রথম দিনের সকালের সেশনে বাংলাদেশ দলের ৪ উইকেট তুলে নেয় পাকিস্তান। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশ হারায় ৬ উইকেট। দুই দিনের বাকি ৪ সেশনে আর কোন উইকেট পড়েনি। সাগরিকার পাড়ে আজ (রোববার) তৃতীয় দিনের সকালে স্নিন্ধতা ছড়ালেন তাইজুল ইসলান, মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই বোলার তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানের ৪ উইকেট।
প্রাপ্তির সকালে বাংলাদেশ দলের গলার কাটা হয়ে বিধে আছেন আবিদ আলী। ৯৩ রান নিয়ে সকালে ব্যাট করাতে নামা এই ব্যাটসম্যান নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক তুলে নিয়ে অপরাজিত আছেন ১২৭ রানে। সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় সেশন শুরু করবেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনের খেলা শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২০৩ রান তুলেছে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে তারা বাংলাদেশের থেকে এখনো ১২৭ রানে পিছিয়ে।
টেস্ট ম্যাচ হলেও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে যাচ্ছে সকালেই। তবে আগের দিন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলী আর আব্দুল্লাহ শফিক যেভাবে ব্যাট করেছেন, তার প্রভাবেই হয়তো আজ গ্যালারি ফাঁকা প্রথম সেশনে। তবে সে সবের প্রভাব পড়ল মাঠের ক্রিকেটে।
কোন উইকেট না হারিয়ে স্কোর বোর্ড ১৪৫ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। আবিদ ৯৩ ও শফিক ইনিংস শুরু করেন ৫২ রানে। দিনের প্রথম ওভারেই বল হাতে বাজিমাত তাইজুলের। জোড়া আঘাতে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি ফেরান এই বাঁহাতি। ইনিংসের ৫৮তম ওভারের পঞ্চম বলে শফিককে গুড লেন্থে খেলান তাইজুল। খানিকটা জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন পাকিস্তান ওপেনার। তবে বলটা তার ব্যাটে যাওয়ার আগেই ছুঁয়ে গেছে প্যাড।
শফিক এদিন কোন রান যোগ না করে ফেরেন আগের দিনের ৫২ রানে। পরের বলেই সাজঘরে আজহার আলী। তাইজুল বলটি করেছিলেন লেগ স্টাম্পে। সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন আজহার। কিন্তু বলের লাইন মিস করেন। বলটা তার ব্যাটের বাইরের কোণা এড়িয়ে সরাসরি আঘাত হানে প্যাডে। বাংলাদেশের আবেদনে শুরুতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউতে সফলতা ধরা দেয় টাইগারদের হাতে।
দুই সতীর্থকে হারানোর পর নিজের চতুর্থ টেস্ট শতক তুলে নেন আবিদ। তাইজুলের করা ইনিংসের ৬৮তম ওভারের প্রথম বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই দুটো রান তুলে নেন তিনি। তাতেই পৌছে যান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। তিন অঙ্কে পৌঁছুতে পাকিস্তানি ওপেনার বল খেলেন ২০৯টি, ৯টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকান দুটি।
বাংলাদেশে এসে রান খরায় ভোগা বাবর আজম সুবিধা করতে পারেননি চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। ইনিংসের ৭২তম ওভারের মিরাজের করা চতুর্থ বলটি সোজা পড়ে ভেতরে ঢোকে। বলের লাইন মিস করেন বাবর। এতে আঘাত করে অফ স্টাম্পে। ৪৬ বল খেলা বাবরের কাছে নিজের আউটের ব্যাখ্যা থাকারও কথা নয়। মিরাজের সোজা বলগুলোর সবই খেলছিলেন সামনের পায়ে ভর করে। অথচ এটিই খেলতে গেলেন পিছনের পায়ে।
২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল সুবিধা করতে দেয়নি নতুন ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ আলমকেও। এবারও বাজিমাত তাইজুলের। বাঁহাতি ফাওয়াদের উইকেট অবশ্য যতটা তাইজুলের তার থেকে বেশি দাবি লিটন দাসের। অফ স্টাম্পের পড়ে তীক্ষ্ণ বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢোকা বল ঠিক মতো খেলতে পারেননি ফাওয়াদ। গ্লাভস ছুঁয়ে প্যাডে লেগে একটু উপরে উঠে যায়। চমৎকার রিফ্লেক্সে ঝাঁপিয়ে দ্বিতীয় চেষ্টায় ক্যাচ গ্লাভসে জমান লিটন।
সকাল থেকে এক প্রান্তে টানা বোলিং করা তাইজুল নিজের তৃতীয় শিকার করার পর সুযোগ তৈরি করেছিলেন আরেকটি। ৮০তম ওভারে আবিদ আলীকে ফেরাতে পারতেন যদি স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারতেন।
৮০ ওভার শেষে নতুন বল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সে পথে হাঁটলেন না অধিনায়ক মুমিনুল হক। পুরোনো বল নিয়ে পাকিস্তানি বোলারদের রাখলেন চাপের মধ্যে। যদিও পরে ৮৮তম ওভারে নতুন বল গ্রহণ করে বাংলাদেশ। তবে তাইজুল-মিরাজ যেভাবে বল করেছেন, তাতে আবারও আক্ষেপ ঝরল সাকিবের অনুপস্থিতিতে। বাঁহাতি এই স্পিনার থাকলে আরো বেশি চাপ তৈরি হতো সফরকারী শিবিরে। কিংবা যদি একাদশে রাখা যেত আরেকজন স্পিনার!
প্রথম সেশনে ৩১ ওভার খেলে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান দলের সংগ্রহ ৫৮ রান। সব মিলিয়ে ২০৩ রান তুলে সকালের সেশন শেষ করল তারা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের থেকে এখনো ১২৭ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা।
বিএসডি/এসএসএ