টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে প্রথমবারের মতো নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল চলাচলের লাইন। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর ভাটারা পর্যন্ত তুরাগ নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে রুটটি। ‘এমআরটি লাইন-৫ নর্দান’ প্রকল্পের আওতায় চলবে এই কাজ। লাইনটি গাবতলী থেকে নদীর তলদেশে প্রবেশ করবে। রুটটি বাস্তবায়নে নির্মাণ ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, মেট্রোরেলের এ রুটের উড়াল অংশ রাখা হয়েছে তুরাগের ওপারেই। এরপর গাবতলী থেকে দারুসসালাম হয়ে মিরপুর-১, ১০, ১৪ হয়ে কচুক্ষেত আর তারপরই বনানী থেকে গুলশান-২ হয়ে পৌঁছাবে নতুন বাজার। সর্বশেষ স্টেশন ভাটারায় গিয়ে আবার উপরে উঠবে এই রেললাইন। রুটটির সর্বশেষ স্টেশনও হবে সেখানে। পাতাল ও উড়ালের সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে ক্রমেই মেট্রোরেল।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৫) নর্দান রুট প্রকল্পের পরিচালক মো. আফতাব হোসেন খান এরই মধ্যে গণমাধ্যমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুট প্রকল্পের সমীক্ষা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। রুটের নকশার অগ্রগতি বর্তমানে ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। যে কারণে ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চলমান। গেল ১১ আগস্ট যৌথ তদন্ত সমাপ্ত হয়েছে।
মো. আফতাব হোসেন খান বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে উত্থাপিত আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তির জন্য শুনানিও শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার সাভার উপজেলার বিলামালিয়া ও কোন্ডা মৌজায় প্রথম পর্যায়ে ৪০ দশমিক ১৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চার ধারার নোটিশ জারি করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২২ সালে প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে।
প্রকল্পের এই পরিচালক আরও বলেন, প্রকল্পের সমীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এখন নকশার কাজ পুরদমে চলছে। নকশা ও সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী- মেট্রোরেল রুটটি তুরাগ নদীর তলদেশ দিয়েই যাবে। এরপর ভাটারার আগে গিয়ে তা উড়ালে উঠবে।
তার দাবি, নকশার পর তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। কোন কাজ কী পরিমাণ হয়, এগুলো দেখার জন্যই এমনটা করা। আগামী বছর প্রকল্পটির সিভিল ওয়ার্ক শুরু হবে। যদিও এর আগেই তুরাগের তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০২৮ সাল নাগাদ রুটটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। রুটটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে পাতাল হবে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং উড়াল থাকবে ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। পুরো রুটে স্টেশন থাকবে মোট ১৪টি। যার মধ্যে পাতাল অংশে থাকবে নয়টি আর উড়াল অংশে মোট পাঁচটি স্টেশন রাখা হবে।
বিভিন্ন কারণে মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করছে ডিএমটিসিএল। যদিও ঢাকা শহরের আশপাশের ট্রাফিক কমিয়ে ফেলাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। শহরের বাসিন্দাদের জন্য আধুনিক ও নিরাপদ ট্রানজিট ব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে। এতে ঢাকার আশপাশ থেকে অফিস করা যায় মূলত এ লক্ষ্যকেই সামনে আনা হয়েছে। মহানগরের চাপ ও জটলা কমানোর পাশাপাশি প্রকল্পটি রাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি অবদান রাখবে বলে মনে করছেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহনের অংশ হিসেবে মোট ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ১২৯ দশমিক ৯১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে ৬৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার উড়াল এবং ৬১ দশমিক ১৭ কিলোমিটার পাতাল রুট থাকবে।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত লাইনের পুরো রুটে মোট ১০৫টি স্টেশন থাকবে। যার মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্কও গড়ে তোলা হবে। মূলত সেই লক্ষ্যে সরকার ‘কর্মপরিকল্পনা-২০৩০’ গ্রহণ করেছে। আর তা সামনে রেখেই মেগা প্রকল্পটিকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিএসডি /আইপি